২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:১৭:০৬ অপরাহ্ন


জন্মদিনে জনি লিভারের ‘লিভার’ হয়ে ওঠার গল্প
বিনোদন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৮-২০২২
জন্মদিনে জনি লিভারের ‘লিভার’ হয়ে ওঠার গল্প জনি লিভার। ফাইল ফটো


১৯৫৭ সালের ১৪ অগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন বলিউডের জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতা। একবার হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির তরফে একটি অনুষ্ঠানে সিনিয়র অফিসারদের সামনে মিমিক্রি করে দেখাচ্ছিলেন জনি। তার অভিনয় দেখে সিনিয়র অফিসাররা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তারাই তাকে নতুন নাম দেন, জনি লিভার।

নব্বইয়ের দশকে বলিউডের কম-বেশি প্রায় প্রত্যেক সিনেমাতেই হাস্যকৌতুক অভিনেতার ভূমিকায় জনি লিভার ছিলেন পরিচালক এবং প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ। জনির কমিক সেন্স এতটাই প্রখর ছিল যে পর্দায় তার উপস্থিতি দর্শককে কখনো মুখ ভার করে থাকতে দেয়নি। অক্ষয় কুমার, গোবিন্দ, সালমান খান, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে তৎকালীন বলিউডের প্রায় প্রত্যেক প্রথম সারির অভিনেতার সঙ্গেই স্ক্রিন শেয়ার করেছেন জনি।

১৯৫৭ সালের ১৪ অগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন বলিউডের এই জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। তার আসল নাম কিন্তু জনি লিভার নয়। বলিউডে পা রাখার আগে জন রাও, প্রকাশ রাও নামেই পরিচিত ছিলেন জনি লিভার। তিনি যখন খুব ছোট, তখনই তার পরিবার অন্ধপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে এসে ওঠে। জনির বাবা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির অপারেটর ছিলেন। তিন কন্যাসন্তান এবং জনিসহ তিন পুত্রসন্তানকে নিয়ে বড়ই অভাবের সংসার ছিল তাদের।

সাংসারিক নিত্য অভাব এবং চরম দারিদ্র্যের কারণে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জনি। সেই ছোট বয়সেই সংসার চালানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পেন-পেনসিল বিক্রি করার কাজ নিয়েছিলেন তিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। বিশেষত তিনি খুব ভালো নকল করতে পারতেন। তিনি বড় হয়ে বলিউডে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন।

সেই সময় তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই দুর্বল ছিল যে বলিউডে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখলেও তা পূরণ করার বিষয়ে ভাবতেই পারতেন না জনি। একটু বড় হওয়ার পর তার বাবা তাকে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানিতেই একটি চাকরির বন্দোবস্ত করে দেন। তবে চাকরি করার পাশাপাশি সহকর্মীদের বিভিন্ন বলিউড অভিনেতার মিমিক্রি করে দেখাতেন এবং বেশ প্রশংসিত হতেন জনি।

আর এভাবে এক দিন অফিসে কৌতুক অভিনয় করতে করতেই তিনি তার বিশ্ববিখ্যাত নামটি অর্জন করে নেন। একবার হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির তরফ থেকে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিনিয়র অফিসারদের সামনে মিমিক্রি করে দেখাচ্ছিলেন জনি। তার অভিনয় দেখে সিনিয়র অফিসাররা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তারাই তাকে নতুন নাম দেন–জনি লিভার। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ‘লিভার’ শব্দটিই হয়ে ওঠে তার পদবি।

সেই সিনিয়র অফিসারদের সুপারিশেই এরপর থেকে বিভিন্ন কমেডি শো-তে ডাক পেতে শুরু করেন জনি। এরপর থেকেই কার্যত কমেডি দুনিয়ায় তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। কমেডি শো-র দৌলতে জনি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন যে একসময় শো-র চাপে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়।

ভারতের প্রথম ‘মাস পপুলার স্ট‍্যান্ড-আপ কমেডিয়ান’ ছিলেন জনি লিভার। ‘তুম পার হাম কুরবান’ ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে ডেব্যু করেন জনি। এই ছবিতে অভিনয় করে বলিউড পরিচালক তথা অভিনেতা সুনীল দত্তের নজরে পড়ে যান তিনি। ১৯৮২ সালে সুনীল দত্ত ‘দার্দ কা রিস্তা’ ছবিতে একটি চরিত্রে জনিকে কাজের সুযোগ করে দেন। এরপর আর তাকে কখনো ঘুরে তাকাতে হয়নি।

প্রায় চার দশকের অভিনয়জীবনে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন জনি। আজও বলিউডের কৌতুক অভিনেতাদের প্রসঙ্গে উঠলে জনি লিভারের নাম প্রথমে উঠে আসবে। ক্যারিয়ারে এত সফলতা অর্জনের পরও তার আচার-আচরণে কখনো দম্ভ প্রকাশ পায়নি।

ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান পুরস্কারের জন্য তেরোবার মনোনীত হন এবং দিওয়ানা মাস্তানা ও দুলহে রাজা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন বিশ্ববিখ্যাত এই কমেডিয়ান।