২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন


জুমার নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ যেসব নির্দেশ দিয়েছেন
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৮-২০২২
জুমার নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ যেসব নির্দেশ দিয়েছেন ফাইল ফটো


মুসলিম উম্মাহর কাছে জুমার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত মূল্যবান। কারণ আল্লাহ তাআলা এ দিনটি আগের নবি-রাসুলদের উম্মতদেরকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা জুমার দিনটিকে সাপ্তাহিক ইবাদাতের দিন হিসেবে গ্রহণ করেনি। তাদের মধ্যে কেউ শনিবারকে আবার কেউ রোববারকে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। জুমার দিনটি মুমিন মুসলমানের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আল্লাহ তাআলার কাছে জুমার দিনটি অত্যন্ত মর্যাদাবান হওয়ার কারণেই তিনি দুনিয়ার শুরু থেকেই বেশিরভাগ কল্যাণমূলক কাজ ও ঘটনা এদিনে সম্পন্ন করেছেন। সর্বোপরি এ দিনেই কিয়ামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর এ দিনেই রয়েছে কল্যাণ ও উত্তম জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ার নির্দেশ।

আল্লাহ তাআলার কাছে জুমার দিনটি এতই পছন্দনীয় ও মর্যাদাবান যে, তিনি এ দিনে উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য স্পেশালভাবে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজের পরপরই রিজিকের সন্ধানে জমিনে বিচরণ করতে বলেছেন। আবার নামাজের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের ধর্মীয় নেতাদের (ইমামদের) নসিহত শোনাকে আবশ্যক করে দিয়েছেন।

১. জুমার দিনের নামাজ ও ইবাদাত-বন্দেগি ফজিলত অন্যান্য দিনের ইবাদাত-বন্দেগির তুলনায় বেশি। বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ জুমার নামাজ কেন পড়বেন? জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কী নির্দেশ দিয়েছেন? তা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

কুরআনের এ নির্দেশ অনুযায়ী জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর মানুষের একমাত্র আবশ্যক কর্তব্য হলো, জুমার নামাজ আদায়ের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদের দিকে দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া। নামাজের সময় সব ধরনের খেল-তামাশা, কাজ-কারবার বন্ধ রাখা এবং নামাজ শেষ হওয়ার পর জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়া।

২. জুমার আজানের পর দুনিয়ার অন্য যে কোনো কাজ, তা হতে পারে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আনন্দ-বিনোদন বা খেল-তামাশা; এ সব কিছুতে বান্দা যেন থমকে না যায় সে জন্য আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-

وَ اِذَا رَاَوۡا تِجَارَۃً اَوۡ لَهۡوَۨا انۡفَضُّوۡۤا اِلَیۡهَا وَ تَرَکُوۡکَ قَائِمًا قُلۡ مَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَیۡرٌ مِّنَ اللَّهۡوِ وَ مِنَ التِّجَارَۃِ وَ اللّٰهُ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

‘তারা যখন কোনো ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা জুমা : আয়াত ১১)

৩. এর আগের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম রেখে আল্লাহর হুকুম পালনে কেউ যদি এগিয়ে আসে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জন্য উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। কেননা আল্লাহ তাআলাই বান্দার সর্বোত্তম রিজিকদাতা। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-

فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

‘এরপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা : আয়াত ১০)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অভয় দিয়ে বলেন, তোমরা নামাজ আদায় করে, তাঁর জিকিরের সঙ্গে জীবিকার সন্ধান করলে তিনিই বান্দাকে উত্তম রিজিক দান করবেন। তিনিই বান্দাকে দুনিয়ার উত্তম জীবিকাসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজে সফলতা দান করবেন।

এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ পূর্ণ উদ্যোমের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদের দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া উচিত। বান্দার প্রতি কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, বান্দার উত্তম রিজিক ও কল্যাণ লাভের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা শর্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেল-তামাশা ও আনন্দ-ফূর্তি বাদ দিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে বলেছেন।

আবার নামাজ শেষে জীবিকার সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁকে ফজিলতপূর্ণ দিনে অধিক স্মরণ করতে বলেছেন। এ দিনে আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও চেষ্টার বিনিময়ের ফলেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে উত্তম রিজিক তথা জীবিকা দান করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার নামাজ পড়ার নির্দেশ বাস্তবায়নে দ্রুত এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। এ দিনে বেশি বেশি ইবাদাত-বন্দেগি করে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে উত্তম রিজিকসহ সকল অনুগ্রহ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।