২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৮:২৩ অপরাহ্ন


ঘরোয়া উপায়ে জল বিশুদ্ধ করার সহজ ৭টি উপায়
ফারহানা জেরিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২২
ঘরোয়া উপায়ে জল বিশুদ্ধ করার সহজ ৭টি উপায় ফাইল ফটো


জলের ওপর নাম জীবন হলেও যদি সেটা দুষিত হয় তাহলে জলই হতে পারে নানা রোগের কারণ। তার কারণ যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই জল মানুষের বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হয় সেখানে লিকেজ বা পুরানো পাইপের কারণে জল দুষিত হয়ে পড়ে। এছাড়া বাড়ির ট্যাংকগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করাও জল দুষিত হয়ে পড়ার আরেকটি কারণ।

তবে এই জলে চাইলে ৭টি উপায়ে শতভাগ বিশুদ্ধ করা সম্ভব।

১. ফুটিয়ে: জল বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে পুরানো ও কার্যকর পদ্ধতির একটি হল সেটা ফুটিয়ে নেয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, জল ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফোটানো হলে এরমধ্যে থাকা জীবাণু, লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর সেই জল ঠাণ্ডা করে ছাকনি দিয়ে ছেকে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন ওয়াটার এইডের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান আবদুল্লাহ আল মুঈদ। জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যাবহার করার কথাও জানান তিনি। সেইসঙ্গে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন সেইসব পাত্র বা যে গ্লাসে জল খাওয়া হচ্ছে সেটি যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা।

২. ফিল্টার: জল ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত থাকতে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। তাছাড়া যাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফিল্টারে জল বিশুদ্ধ করাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। বাজারে বিভিন্ন ধরণের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার মধ্যে অনেকগুলো জীবাণুর পাশাপাশি জলের দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম। বাজারে মূলত দুই ধরণের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার একটি সিরামিক ফিল্টার এবং দ্বিতীয়টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত রিভার অসমোসিস ফিল্টার।

৩. ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং: জলের জীবাণু ধ্বংস করতে ক্লোরিন বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক। যদি জল ফোটানো বা ফিল্টার করার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে জল বিশুদ্ধিকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে জল পরিশোধন করা যেতে পারে। সাধারণত দুর্গম কোথাও ভ্রমণে গেলে অথবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বা জরুরি কোন অবস্থায় ট্যাবলেটের মাধ্যমে জল শোধন করা যেতে পারে। সাধারণত প্রতি তিন লিটার জলে একটি ট্যাবলেট বা ১০ লিটার জলে ব্লিচিং গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ জল পাওয়া যায়।

৪. পটাশ বা ফিটকিরি: এক কলসি জলে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে জলের ভেতরে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে স্তর হয়ে জমে। এক্ষেত্রে পাত্রের উপর থেকে শোধিত জল সংগ্রহ করে তলানির জল ফেলে দিতে হবে। 

৫. সৌর পদ্ধতি: যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত জলের অন্য কোনও উপায় নেই সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় সৌর পদ্ধতিতে জল বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে দুষিত জলে জীবাণুমুক্ত করতে কয়েকঘণ্টা তীব্র সূর্যের আলো ও তাপে রেখে দিতে হবে। এতে করে জলের সব ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। জরুরি অবস্থায় দূষিত জল জনিত রোগ ঠেকাতে এই পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৬. আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি: পরিষ্কার ও স্বচ্ছ জল জীবাণু মুক্ত করার জন্য অতিবেগুনি বিকিরণ কার্যকরী একটা পদ্ধতি। এতে করে জলের সব ধরণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। বাজারের বেশ কয়েকটি আধুনিক ফিল্টারে এই আল্ট্রাভায়োলেট পিউরিফিকেশন প্রযুক্তি রয়েছে। তবে ঘোলা জলে বা রাসায়নিক-যুক্ত জলে এই পদ্ধতিটি খুব একটা কার্যকর নয়। তাছাড়া এই উপায়টি কিছুটা ব্যয়বহুলও।

৭. আয়োডিন: এক লিটার জলে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলেই জল বিশুদ্ধ হয়ে যায়। তবে এই কাজটি শুধুমাত্র দক্ষ কারও মাধ্যমে করার পরামর্শ দিয়েছেন মিস্টার মুঈদ। কেননা জল ও আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে সেই জল শরীরের ক্ষতি করতে পারে।