২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:০২:১৪ অপরাহ্ন


রাবিতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে স্থবির রাজশাহী, যানজটে জনদূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২২
রাবিতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে স্থবির রাজশাহী, যানজটে জনদূর্ভোগ রাবিতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে স্থবির রাজশাহী, যানজটে জনদূর্ভোগ


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে শহরজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষানগর রাজশাহী হয়ে উঠেছে যানজটের নগর। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটারের এ শহর যেন গতিহীন। 

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনজট আর যানজটে গোটা শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবির ভাব। নানা নির্দেশনা ও বিশেষ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেও শহরের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার (২৫ জুলাই) ছিল বিজ্ঞান এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। ‘সি’ ইউনিটে চার শিফটে ৭২ হাজার ৪১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। 

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাবি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটের পরীক্ষা শুরু হয়। পরে সকাল ১০টা থেকে ১১টা দ্বিতীয় শিফট, দুপুর ১২টা থেকে ১টা তৃতীয় শিফট ও বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটে এক হাজার ৯০২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৬৭ হাজার ২৩৭ জন। প্রতি আসনে লড়াই করছেন ৩২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। 

এ পরিমাণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবকও রয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে প্রায় চার লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে উত্তরের এ ছোট্ট বিভাগীয় শহরে। ফলে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন যানজট। অসহনীয় যানজটের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে রাজশাহী। 

দীর্ঘ সময় বসে থেকেও অনেকে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। অনেকের অফিস বা কর্মস্থলে পৌঁছাতে দ্বিগুণ সময় লাগছে। বিশেষ করে সকালে ও দুপুরের শিফটের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এতে অল্প সময়ে প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখতে শিক্ষার্থীদের বেগ পেতে হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে হলের বাইরে, প্রধান সড়ক ও সংযোগ সড়কগুলোতে অতিরিক্ত জনবল নিয়েও যানজটের মুখ খুলতে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

যদিও এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল ট্রাফিক বিভাগ। তীব্র যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুভাবে যান চলাচলসহ ভর্তি পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করতে যান চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক নির্দেশনা দিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ভারি যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল, খালেদা জিয়া হল, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি চলাচলের জন্য ব্যবহার, দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলার বাসগুলোর ক্ষেত্রে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক এড়িয়ে বেলপুকুর বাইপাস ও ফল গবেষণার সামনের সড়ক ব্যবহার করাসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখন কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। রিকশার শহরে বাড়তি আয়ের আশায় শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলো থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ঢুকে পড়েছে। তারা ট্রাফিক আইন ও নির্দেশনা বা ভাড়ার পরিসীমা কিছুই মানছেন না। 

দেখা গেছে, রাবি সংলগ্ন কাটাখালী সড়ক, বিনোদপুর, কাজলা গেট, রুয়েট গেট, তালাইমারী, ভদ্রা, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, গোরহাঙ্গা রেলগেট, নিউমার্কেট, অলোকার মোড়, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড় সড়কে যানজট সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন এ সড়কগুলোতে প্রায় সময়ই যান চলাচল ২০-৩০ মিনিট করে বন্ধ থাকছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ছে। যানজটের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সবাই এক-দেড় ঘণ্টা আগেই নিজ নিজ এলাকা থেকে বের হলেও লাভ হচ্ছে না। পথে গিয়ে আটকে থাকছেন। 

রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মোঃ আতাউল-আল-কোরাইশি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বর্তমানে ১২০ জন ট্রাফিক পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু প্রচুর যানবাহন সড়কে থাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। 

উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, রাবি ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে যানজট এড়াতে ট্রাফিক বিভাগ আগে থেকেই বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু কোনো নির্দেশনাই কেউ মানছেন না। বাইরের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস রিজার্ভ করে শিক্ষার্থীরা আসছেন। সেই বাসগুলো শহরের আশপাশের মূল সড়কেই পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাইরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে কোনো কিছুই সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এরপরও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হলেও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজশাহীর সময়/এএইচ