২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:০৫:১৯ অপরাহ্ন


দম্পতির জন্য অতীতের যেসব আলোচনা ঠিক নয়
ইসলামীক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২২
দম্পতির জন্য অতীতের যেসব আলোচনা ঠিক নয়


অতীতের কোনো সম্পর্ক নিয়ে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর আলোচনা না করাই উত্তম। এমন অনেক পরিবার আছে, যারা আগে তেমন ধর্ম-কর্ম করতো না। কিন্তু পরে দ্বীনের আলো পেয়ে পরস্পর ইসলামি জীবন-যাপন শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রী কারোরই উচিত নয় যে, অতীত সম্পর্ক নিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করা। কারণ অতীত সম্পর্কের আলোচনায় অনেক সময় নিজের সম্পর্কই ভেঙে যেতে পারে। এ সম্পর্কে আলোচনা না করার দিকনির্দেশনাও দেয় ইসলাম। কী সেই নির্দেশনা?

এসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَسۡـَٔلُوۡا عَنۡ اَشۡیَآءَ اِنۡ تُبۡدَ لَکُمۡ تَسُؤۡکُمۡ

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে (পরস্পর) প্রশ্ন করো না; যা প্রকাশিত হলে তোমাদের খারাপ/কষ্ট লাগবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১০১)

কোনো কিছু জানতে গিয়ে যদি হালাল সম্পর্ক বা বিষয় হারাম হয়ে যায়; তবে সেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে না চাওয়াই উত্তম। এ আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে।

আয়াতটি নাজিলের পর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের বেশি বেশি প্রশ্ন করতে নিষেধ করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যার প্রশ্ন করার ফলে কোনো জিনিস হারাম করে দেওয়া হলো; অথচ এর আগে তা হালাল ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দাম্পত্য জীবনের বিষয়টিও পুরোপুরি এ রকম। স্বামী-স্ত্রীর হালাল সম্পর্ক অতীত জীবনের কথা বলতে গিয়ে ছাড়াছাড়ি কিংবা প্রচণ্ড অশান্তি শুরু হয়ে যায়। যার শেষ পরিণতি হয় চরম দুঃখের।

আর কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও সৌন্দর্য, সহনশীলতা ও শিষ্টাচার বজায় রাখার কথা বলেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-

‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

অতীত জীবনের কথাবার্তার কুফল!

অনেক নারী তার স্বামীর অতীত নিয়ে আবার অনেক পুরুষ তার স্ত্রীর অতীত জীবনের সবকিছু জানার ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহী হয়ে ওঠে। দাম্পত্য জীবনে অনেক সময় এটা হয়ে থাকে। পরস্পরের চাপাচাপিতে একে অপরের ঘটনা বর্ণনা করে; এটি তাদের উভয়ের জন্য বড় বোকামি হয়ে যায়। কারণ এ বোকামির অনেক বড় মাশুল দিতে হয়। অতীত সম্পর্কের সরল স্বীকারোক্তি অনেক সময় সুন্দর বিবাহিত পারিবারিক জীবনকে হিংষার বিষে ওলট-পালট করে দেয়।

যেমন- স্ত্রী হয়তো তার স্বামীর কাছে জানতে চায়- আগে কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল কিনা? যদি থেকে থাকে তবে সে নারী দেখতে কেমন ছিল? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।

আবার স্বামীও অনেক সময় স্ত্রীর কাছে জানতে চায়, বিয়ের আগে কোনো পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল কিনা? তার সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কেমন ছিল? ইত্যাদি বিষয় জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।

উভয়ে অতি আবেগে কিংবা পরস্পরের চাপাচাপিতে অতীত জীবন নিয়ে কথা বলাই হতে পারে জীবনের চরম বোকামি। আর এতে ভেঙে যেতে পারে নিজের সংসার। কিংবা পারিবারিক সুখ-শান্তিও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

স্বামী-স্ত্রীর এসব কথাবার্তা একদমই অনর্থক ও শয়তানের কাজ। যা দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আবেগ কিংবা বিশ্বাস করে বলা এসব কথায় জন্ম নেয় প্রচণ্ড সন্দেহ ও অবিশ্বাস। যা সুন্দর সম্পর্ককে চিরদিনের জন্য আলাদা করে দেয়।

কোরআন-সুন্নায় এসব কথা বলা থেকে বিরত থাকার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা এ সব কথায় বিবাহের মতো হালাল সম্পর্কও তালাকের মাধ্যমে হারাম হয়ে যায়। অযথা কথাবার্তায় সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পারিবারিক শান্তি চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। সংসারে সন্তান-সন্তুতির জীবনও ধ্বংস হয়ে যায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমান নারী-পুরুষের উচিত, দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা। পরস্পরের অতীত জীবনের সম্পর্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনা না করা। বরং সুন্দর সুখময় জীবনের জন্য বর্তমান সময়ে একে অপরের প্রশংসা ও সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকাই উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারী-পুরুষকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অতীত জীবনের আলোচনা থেকে বিরত রাখুন। অহেতুক কথাবার্তা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময় / এফ কে