করোনার পরে চোখ রাঙাচ্ছে অতি সংক্রামক মারবার্গ ভাইরাস। আফ্রিকায় ক্রমেই মহামারী হয়ে উঠছে এই ভাইরাস। ঘানায় ইতিমধ্যেই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে ও মৃত্যুহারও বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা (হু)। মারবার্গের ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে প্রায় ন’জনের।
হু-র মতে ইবোলার মতো সংক্রমক এই ভাইরাস আসে বাদুড় থেকে। মানুষের দেহরসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। হু জানাচ্ছে, কয়েক দশক আগে যখন মারবার্গ থাবা বসিয়েছিল তখন আফ্রিকায় এই ভাইরাসের মর্টালিটি রেট ছিল ২৪ শতাংশ। বর্তমানে সেই পরিসংখ্যান লাফিয়ে পৌঁছে গিয়েছে ৮৮ শতাংশে।। ফলে করোনার মতোই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে।
ঘানার দুই বাসিন্দার এই অতি সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ গত ২৬ জুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ঠিক পরদিনই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে, গত ২৮ জুন মারবার্গে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। সেই দিনই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে খবর। ঘানার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, করোনার মতো এই ভাইরাসেরও বাহক হতে পারে বাদুড়। এক প্রজাতির ফলভোজী বাদুড়ের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। মারবার্গ ফিরোভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত ভাইরাসের প্রজাতি। মানুষ ও পশুর শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে খুব মারাত্মক ভাইরাল হেমারেজিক ফিভার হতে পারে। হু-র তালিকায় যে সমস্ত সংক্রামক ভাইরাসের প্রজাতির নাম তালিকাভুক্ত করা আছে, তার মধ্য়ে মারবার্গ একটি।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তিন দিনের মধ্য়ে ধুম জ্বর আসবে রোগীর। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, পেশির টান-খিঁচুনি হতে পারে। পেটে ব্য়থা বা ক্র্যাম্প হতে থাকবে। সেই সঙ্গে ডায়েরিয়া হবে। কিছু খেলেই বমি হয়ে যাবে। সাত দিন পর্যন্ত একটানা এইসব উপসর্গ দেখা দেবে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেবে এই ভাইরাস। সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে গেলে শরীরের নানা অংশ থেকে রক্তপাত হবে। মুখ, নাক, যোনি থেকে ব্লিডিং হতে পারে। কাটা জায়গা থেকে রক্তপাত বন্ধ হবে না। গবেষকরা বলছেন, শুরুতে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, মেনিনজাইটিসের মতোই উপসর্গ দেখা দেয় এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে। তাই মারবার্গ বলে আলাদা করে চেনা যায় না। ফলে সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। মৃত্যু হতে পারে রোগীর।