২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:২৮:২১ পূর্বাহ্ন


রামেকে চিকিৎসাধীন ডায়েরিয়ার রোগীদের অধিকাংশই শিশু-বৃদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২২
রামেকে  চিকিৎসাধীন ডায়েরিয়ার রোগীদের অধিকাংশই শিশু-বৃদ্ধ রামেকে চিকিৎসাধীন ডায়েরিয়ার রোগীদের অধিকাংশই শিশু-বৃদ্ধ


রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীর অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- চলতি মাসের গত ১৭ দিনে হাসপাতালে ১ হাজার ৩৭২ জন রোগী ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসের ১ তারিখে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৪৫ জন শিশুসহ ১৩০ জন রোগী ভর্তি ছিলো। ওই দিন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৩ শিশুসহ ৪৮ জন, ২ জুলাই ১৯ শিশুসহ ৪৫ জন (চিকিৎধীন ছিল ১১৯ জন), ৩ জুলাই ১৬ শিশুসহ ৪৬ জন (চিকিৎধীন ছিল ১২৮ জন), ৪ জুলাই ১৬ শিশুসহ ৩০ জন (চিকিৎসাধীন ছিল ১০৭ জন), ৫ জুলাই ২২ শিশুসহ ৫৮ জন (চিকিৎসাধীন ছিল ১১৩ জন), ৬ জুলাই ১১ শিশুসহ ৪৪ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ১২৭ জন), ৭ জুলাই ১৪ শিশুসহ ২২ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ১০৬জন), ৮ জুলাই ১৬ শিশুসহ ৪০ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৬১ জন), ৯ জুলাই ৩৩ শিশুসহ ৫৭ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৭৯ জন), ১০ জুলাই ৫ শিশুসহ ১৫ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৬০ জন), ১১ জুলাই ৯ শিশুসহ ১৯ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৪৭ জন), ১২ জুলাই ১৩ শিশুসহ ২৯ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৬৬ জন), ১৩ জুলাই ৮ শিশুসহ ২৬ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৮১ জন), ১৪ জুলাই ১২ শিশুসহ ৩১ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৭৮ জন), ১৫ জুলাই ৮ শিশুসহ ২৩ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৭০ জন), ১৬ জুলাই ৫ শিশুসহ ২১ জন জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৬৮ জন) এবং গত রবিবার (১৭ জুলাই) ১৪ শিশুসহ ৩২ জন (চিকিৎসাধীন ছিল ৮৭ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

সোমবার (১৮ জুলাই) রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিশুদের কেউ কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। দ্রুত ডায়েরিয়া নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েকদিন ধরেই আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা হাসপাতালে বেডে কিংবা মেঝেতে অবস্থান করছেন।

গত ১২ জুলাই ১১ মাস বয়সী নিজের ছেলে সন্তান স্যামুয়েল বিশ্বাস  ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হলে ওইদিনই ছেলেকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান নগরীর শাহমখদুম থানার সন্দেশপুর এলাকার বাসিন্দা নাগরী  বিশ্বাস । জানতে চাইলে নাগরী  বিশ্বাস বলেন, ‘৭ দিন ধরে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করছি। কিন্তু ডায়েরিয়া ভালো হচ্ছে না। বর্তমানে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া রোগীরা সুস্থ হতে সময় লাগছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জনিয়েছে।

তিন দিন আগে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত মোহনপুর উপজেলার দোবাঘাটা এলাকার নুপুর খাতুন তার ৪ বছরের শিশু লামিয়াকে শিশু ওয়ার্ডের ডায়েরিয়া কর্ণারে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু ডায়েরিয়া একটু কমে আসলেও বর্তমানে এখন তার শিশু আমাশয়ে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। এমনিভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় রোগীই দ্রুত ডায়েরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে উঠছে না।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মোহাইমেনুল হক আতিক বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়েরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর অধিকাংশ শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এই ডায়েরিয়া থেকে শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয় না। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ শিশুর এমন অবস্থা (সুস্থ হতে সময় লাগছে)।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন থেকে (চলতি মাসে) তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠানামা করছে। সেই সূর্য্যরে তাপও বেশ তীব্র। এই সময়ে শিশু কিংবা বয়স্কদেও ডি-হাইড্রেশন ও সান স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এই গরমে সবাইকে নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেক করার পাশাপাশি মাংসের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দিয়ে ফল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।

এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী অধিক পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃস্বরণের ফলে ওজন স্তর ধীরে ধীওে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাব রাজশাহীতেও পড়েছে। এজন্য বর্ষা মৌসুমেও তাপমাত্রা তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছুই ছুই করছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চলতি মাসের ১৪ জুলাই সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর পরের দিন ১৫ জুলাই তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, গত শনি (১৬ জুলাই) ও রবিবার (১৭ জুলাই) রাজশাহীতে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

রামেক হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ডায়েরিয়ার প্রকোপ একটু বেড়েছে। জায়গার সংকুলানের কারণে অনেক সময় কোনো রোগ মহামারী আকারে দেখা দিলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের জায়গা দিতে পারি না। তবে ডায়েরিয়া রোগী বর্তমানে যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে চিকিৎসা সেবা দিতে খুব বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে না। ডায়েরিয়ার প্রকোপ আরো বেড়ে গেলেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি, চিকিৎসা সেবা প্রদানে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।