২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে ভুয়াকাজিদের দৌরাত্ব চরমে, থামছে না বাল্যবিবাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৭-২০২২
রাজশাহীতে ভুয়াকাজিদের দৌরাত্ব চরমে, থামছে না বাল্যবিবাহ ফাইল ফটো


রাজশাহী মহানগরীতে ভুয়াকাজির ছড়াছড়িতে বিপাকে পড়েছেন প্রকৃত কাজিরা। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অভিভাবকরা। জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় কিছু কাজিদের কাছ থেকে এবং কয়েকটি পাবলিক প্রেস থেকে জাল বই ছাপিয়ে ওই প্রতারক চক্ররা বিবাহ রেজিস্ট্রি করার জন্য বালামবহি সংগ্রহ করে এ কাজ করছেন। এ ব্যাপারে বৈধ কাজিরা বিভিন্ন সময় নগরীর বিভন্ন থানায় অভিযোগ দিলেও থাকছে তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে কিছু ভুয়াকাজি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আবারও এ পেশায় যোগ দিচ্ছেন।

আইন-বিধি না মেনে এভাবে যদি মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কার্যক্রম চলে তাহলে প্রকৃত কাজিরা হারিয়ে যাবে। দিন দিন নারীদের ভোগান্তি বাড়বে আর ভুয়াকাজিদের দখলে চলে যাবে মহান এ পেশা এমন মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন ভুয়াকাজিদের কারণে বিশেষ করে আক্রান্ত নারীরা মারাত্মক ভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

কাজিদের তথ্য সূত্রে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর বড়বনগ্রাম ফুলতলা মোড়ের শামসুল ইসলাম, নওদাপাড়ার মুকুল হোসেন এবং খাইরুল ইসলাম, বড়বনগ্রাম নামোপাড়ার জিয়া, সুজানগরের ডলার, বালিয়ার জিয়াউর রহমান, শেখপাড়ার জালাল, বসুয়ার রাফিকুল, আলীগঞ্জের শাহাদাৎ হোসেন, কাঠালবাড়িয়ার মনোয়ার হোসেনসহ প্রায় ৪০জন ভূয়া কাজি দীর্ঘদিন থেকে জাল বালামবহি নিয়ে রাজশাহী মহানগরীর অলি-গলিতে বীরদর্পে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছে। এরা এলাকায় নামে কাজি, প্রকৃতপক্ষে তারা কাজি নন। তাদের কারণে প্রকৃত কাজিরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছেন।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে, ভুয়াকাজিরা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয় বা ওয়ার্ডের বৈধ কাজিদের সীল ও জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা কিছু নকলকপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছেছে।  এ নিয়ে মারাত্মকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে কাজি সমাজে। যার কারণে প্রতিনিয়ত সেবাপ্রার্থীরা বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ রেজিষ্ট্রার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জানান, ভুয়াকাজিদের দৌড়াত্বের কারণে প্রকৃত কাজিরা সবসময় প্রশ্নের সন্মুখিন হচ্ছেন এছাড়া তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। তিনি বলেন, একদিকে ভুয়াকাজিদের দৌড়াত্ব অপরদিকে অবৈধ্যভাবে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহের ঘোষণা সবদিকদিয়ে কাজিরা হয়ে পড়েছেন অসহায়। 

রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ রেজিষ্ট্রার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, রাজশাহী কোর্ট চত্বরসহ নগরী এবং জেলার প্রায় সমস্ত এলাকায় ভুয়াকাজিদের দৌড়াত্ব চরম আকার ধারন করেছে, অবিলম্বে এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া নাহলে এ পেশা হুমকির মুখে পড়বে এবং সেবাগ্রহণকারীদের বিড়ম্বনা বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন,  নোটারী পাবলিকের বিষয়ে ২০১৫ সনের ১৯ এপ্রিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় বিচার শাখা ৬ থেকে নোটারী পাবলিক কর্তৃক এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন না করতে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। কাজি সমিতির এই নেতা বলেন, নোটারী পাবলিক মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ না মানলে এবং ভুয়াকাজিদের দৌরাত্ব কমানো গেলে ৮০% বাল্য বিবাহ কমানোসহ সেবাগ্রহনকারীরা শতভাগ বিড়ম্বনা ও প্রতারণা থেকে রেহাই পাবে। 

রাজশাহীর সময়/এ