রাজনীতিবিদদের ধারণাই সত্যি হল! ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসন। প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা হারিয়ে গত কিছুদিন ধরেই একের পর এক ইস্তফা দিচ্ছিলেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। মঙ্গলবারই পদত্যাগ করেছেন চ্যান্সেলর ঋষি সুনক। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষিই।
পিনচার কেলেঙ্কারি
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর থেকেই একের পর এক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে বরিস জনসনের। যার মধ্যে অন্যতম হল ক্রিস্টোফার পিনচার কেলেঙ্কারি। বরিসের মন্ত্রিসভার আইন প্রণেতা ছিলেন পিনচার। ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। পিনচারের বিরুদ্ধে মহিলাদের যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। মদ্যপান করে দুই মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ সামনে আসে। এরপরেই তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে জনসনের দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পিনচারের এই কীর্তির কথা জানতেন না তাঁরা। কিন্তু তারপরেই জানা যায়, আগেই সমস্তটা জানতেন জনসন। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে এরপরেই একের পর এক পদত্যাগ করতে শুরু করেন জনসনের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি
গত মাসেই অনাস্থা ভোটে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন। এর নেপথ্যে ছিল ‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারি।’ ২০২০ সালে করোনা অতিমহামারীর নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ডাউনিং স্ট্রিটের সরকারি বাসভবনে মদ্যপানের পার্টি করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও, ২০২১ সালের এপ্ৰিলে মারা যান প্রিন্স ফিলিপ। রাষ্ট্রীয় শোকের সময়েই সরকারি বাসভবনে আরও দুটি পার্টির আয়োজন করা হয়। পরে এই ঘটনায় ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের কাছে ক্ষমা চান বরিস জনসন।
প্যাটার্সন কাণ্ড
২০২১ সালে তৎকালীন সাংসদ এবং আইনপ্রণেতা ওয়েন প্যাটার্সনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানিকে টাকার বিনিময়ে আইনি সহায়তা দেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ ওঠে। সংসদের স্ট্যান্ডার্ড কমিটি প্যাটার্সনকে ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত সাংসদকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে। অবশেষে প্রবল বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেন প্যাটারসন। পুনরায় নির্বাচন হলে ওই আসনে হেরে যায় কনজারভেটিভ পার্টি।
বাসস্থান সংস্কার কাণ্ড
২০২১ সালে সরকারি ডাউনিং স্ট্রিটে জনসনের সরকারি বাসভবনটি একজন তারকা ডিজাইনের সাহায্যে সংস্কার করার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, বাসভবনে সোনার ওয়ালপেপার লাগানোর অভিযোগও সামনে আসে। ঘটনার সঠিক ব্যখ্যা এবং খরচের হিসাব দিতে না পারায় কনজারভেটিভ পার্টিকে ১৭ হাজার, ৮০০ ডলার জরিমানা করা হয়।
যৌন হয়রানি কেলেঙ্কারি
জনসনের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। যার জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দুজন সাংসদ। ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইস্তফা দেন ইমরান আহমেদ খান নামে একজন সাংসদ। এছাড়া ‘হাউজ অফ কমন্স’-এ বসে পর্নোগ্রাফি দেখার কথা স্বীকার করেন আরেক সাংসদ নেইল প্যারিস। ধর্ষণ এবং অন্যান্য অভিযোগে গ্রেফতার হন দলেরই অন্য এক সাংসদ। তিনি গত মে মাসে জামিন পান।
একের পর এক অভিযোগে কার্যতই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন ব্রিটেনের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। পিনচার কেলেঙ্কারিই তাঁর কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয়।