২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন


পর্তুগালে লিথিয়াম খনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৬-২০২২
পর্তুগালে লিথিয়াম খনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ পর্তুগালে লিথিয়াম খনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ


বর্তমানে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সর্বত্র ব্যাটারির চাহিদা বাড়ছে ৷ আবার সেই ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় লিথিয়াম উত্তোলন পরিবেশের ক্ষতি করছে৷ পর্তুগালের একটি অঞ্চল এমন উভয় সংকটে পড়েছে৷প্রত্যেক দিন সকালে নেলসন গোমেস মনে দুশ্চিন্তা নিয়ে গোয়ালে যান৷ আর কতদিন তিনি গরু পালন করতে পারবেন, সে বিষয়ে তাঁর মনে সংশয় রয়েছে৷ কারণ পর্তুগালের উত্তর-পূর্বে কোভাস দো বারোসোয় লিথিয়ামের খনি চালু হলে মানুষ আর চাষবাস ও গবাদি পশু পালন করতে পারবে না ৷

গোমেস বলেন, ‘‘যা বোঝা যাচ্ছে, এখানে বিশাল মাত্রায় কর্মযজ্ঞ শুরু হবে৷ পাহাড়ে বিস্ফোরণ ঘটবে, খনির কারণে বিশাল পরিমাণ বাড়তি পানির চাহিদা দেখা দেবে, বিকট শব্দও এড়ানো যাবে না৷ আমরা একেবারে পাশেই থাকি৷''গোটা গ্রাম এমন হুমকির মুখে খনির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে৷ প্ল্যাকার্ড ও সাইনবোর্ডে তাদের স্লোগান ‘খনি নয়, জীবন চাই' অথবা ‘সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবো'৷নেলসন গোমেস ও তার প্রতিবেশীরা এক নাগরিক উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ কার্লোস গনসালভেসও তাতে যোগ দিয়েছেন ৷

মৌমাছি পালনকারী হিসেবে তিনি শুধু তাঁর সাড়ে চারশো মৌচাক নিয়েই চিন্তিত নয়৷ কার্লোস বলেন, ‘‘এখানে খনি হলে গোটা গ্রামের জনসংখ্যার চাহিদার সমান পানি খরচ হবে৷ সেই পানি কোথা থেকে আসবে? আমাদের তো সেই পানি নেই৷ একটি পাহাড়ি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা যায় বটে, কিন্তু এমন নদী বার বার শুকিয়ে যায়৷''পর্তুগালে ইউরোপের সবচেয়ে বড় লিথিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে ৷ কোভাস দো বারোসোয় ইতোমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই সম্পদ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের জন্য অভিশাপের মতো হয়ে উঠছে৷

এমনকি জেলা সদর বোটিকাসে মাত্র এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল, যিনি এই প্রকল্পের পক্ষে৷ তাঁর মতে, লিথিয়িমের খনির অনুমতি দেওয়া উচিত৷ সবসময়ে শুধু পরিবেশের কথা না ভেবে অর্থনীতির কথাও ভাবতে হবে৷পর্তুগালের সরকারও সেই সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে চায়৷ সে দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছে, যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গ্রিন ডিল' মেনে চলা বাধ্যতামূলক৷ ইউরোপের নিজস্ব লিথিয়ামের জোগানের ক্ষেত্রেও পর্তুগাল অবদান রাখতে চায়৷কোভাস দো বারোসোর প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণেও অদূর ভবিষ্যতে লিথিয়াম উত্তোলনের কাজ শুরু হতে পারে৷ সেখানে আগেই কোয়ারৎসের খনি রয়েছে৷ মূলত বয়স্ক মানুষের সেই জনপদে প্রতিরোধ খুবই দুর্বল৷ ভিলা গার্সিয়ার মানুষের কাছে খনি নতুন কিছু নয়৷পাশের ট্রানকোসো এলাকায় জোসে আলমেইদা ও তাঁর বন্ধুরা ফ্লায়ার বিতরণ করছেন৷

তাঁরা সেখানকার মানুষের চোখ খুলে দিতে চান, তাঁদের বোঝাতে চান৷ কারণ লিথিয়াম খনি আরও বড় আকারে প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করবে৷ জোসে বলেন, ‘‘খনির বাসিন্দাদের জন্য এর পরিণাম কী হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট জানানো হয় নি৷ মানুষকে ধোঁয়াসায় রেখেই নেপথ্যে যা করার করে নেওয়া হচ্ছে৷''২০ কিলোমিটার দূরে পিনইয়েলের মেয়র এমনকি পর্তুগালের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান৷ রুই ভেন্তুরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে এলাকার ৪০ শতাংশ জমিতে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে৷ সেইসঙ্গে ইউরোপীয় স্তরে তিনি কম ধ্বংসাত্মক বিকল্প সন্ধানের পক্ষে সওয়াল করছেন৷ রুই বলেন, ‘‘আমরা সবাই লিথিয়ামের গুরুত্ব বুঝি৷ কিন্তু লিথিয়াম ছাড়াও যে অন্য পথ রয়েছে, সেটাও আমরা জানি৷ আমাদের সে বিষয়ে আরও গবেষণা চালানো উচিত৷

বিজ্ঞানীদের সেই কাজ করতে দিতে হবে৷ ইউরোপ মুখে সে কথা বললেও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে না৷''মাত্র চার বছর আগে জাতিসংঘ পর্তুগালের উত্তরে কোভাস দো বারোসোকে কৃষি সংস্কৃতি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবনযাত্রাই সেই সম্মান এনে দিয়েছে৷ গ্রামের মানুষ সেই মর্যাদা হাতছাড়া করতে চান না৷ কারণ তাঁরাও তো নিজেদের মতো করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করছেন৷

নরমান স্ট্রিগেল/এসবি