১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ০৩:১৬:৩৪ পূর্বাহ্ন


কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৬-২০২২
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ফাইল ফটো


ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যায় প্রাণিসম্পদের সাড়ে ১১ লাখ টাকা এবং মৎস্য বিভাগের ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রামে বেসরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়ালেও জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে ৪৯টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সোমবার (২০ জুন) সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র। 

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের গারুহাড়া গ্রামের খুটু মিয়া বলেন, আমি অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। এবারও কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার দেড় থেকে ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

ওই ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের কাজিয়াল বলেন, বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় গবাদিপশুগুলোকে নিয়ে উঁচু সড়কে এসেছি। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে গরুগুলোরও খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন রাস্তায় থাকা লাগবে। বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে তারপর বাড়ি যাব।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, রোববার সকালের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৪৯ ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে সব উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে তথ্য না আসায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস্য চাষির ১১৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মুরগি মারা গেছে। এছাড়া গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শস্য তলিয়ে যাওয়ায় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কর্মকর্তারা পরামর্শ দেওয়াসহ তথ্য সংগ্রহ করছেন।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় মেডিকেল টিমের সদস্যরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নাগেশ্বরীতে বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ওয়াস আউট হয়ে গেছে। এ ছাড়া দুধকুমর নদীর কালীগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে। বন্যার পানি আরও তিন দিন বাড়বে। এরপর কমতে শুরু করবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর সময়/এএইচ