১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:৩৫:২৬ পূর্বাহ্ন


চট্টগ্রামে অপহৃত টায়ার ব্যবসায়ীকে উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৬-২০২২
চট্টগ্রামে অপহৃত টায়ার ব্যবসায়ীকে উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেফতার চট্টগ্রামে অপহৃত টায়ার ব্যবসায়ীকে উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেফতার


চট্টগ্রামে অপহরণের ২৪ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি অভিযানিক দল। 

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় অপহরণ চক্রের মুল হোতা মোঃ এমরান হোসেন সজিব (২২)কে গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতার মোঃ এমরান হোসেন সজিব, নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার দক্ষিন জগদানন্দ এলাকার সিহাব উদ্দিন সেলিমের ছেলে। (বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা, জানে আলম এর কলোনী, ৩য় তলায় বসবাস করে)।

শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যা-৭ চট্টগ্রামের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পরিচালক , মোঃ নূরুল আবছার।

তিনি জানান, পেশাগত কারনে ২/৩ মাস পূর্বে কুমিল্লায় অপহরন কারিদের সাথে ব্যবসায়ী মোঃ আমজাদ হোসেন অরফে রেদোয়ানের (২৩) পরিচয় হয়। 

সেই সুবাদে সোমবার (৬ জুন) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে অপহরণকারী জানায়, তার পরিচিত লোকের কিছু পুরাতন টায়ার আছে তা অল্প দামে নিয়ে দিতে পারবে। এ ব্যপারে তাদের সাথে পরপর ২দিন কথাও হয়। 

বুধবার (৮ জুন) সকালে আমজাদকে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে কল করে দ্রুত কুমিল্লায় আসতে বলে অপহরণকারীরা। 

তাদের কথায় সরল বিশ্বাসে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে পৌছায় ব্যবসায়ী আমজাদ। সেখান থেকে অপহরণকারীরা সিএনজি যোগে অজ্ঞাত একটি বিল্ডিংয়ের দু‘তলায় নিয়ে যায় তাকে। 

সেখানে অপহরণকারী মোঃ এমরান হোসেন সজিবসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২ জনকে দেখতে পেয়ে ব্যবসায়ীর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে কৌশলে কিছু কেনার কথা বলে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আসামী মোঃ এমরান হোসেন সজিব তার পকেট থেকে ধারালো একটি ছুরি বের করে ভিকটিমের গলায় ধরে। এ সময় তারা ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় এবং

গামছা দিয়ে মুখ বেধে ফেলে। অপর আসামী মামুনসহ অজ্ঞাতরা গলায় ছুরি ধরে রাখে। 

এরপর ব্যবসায়ীকে একটি রুমে নিয়ে আসামী মামুন, এমরানসহ আরো অজ্ঞাত ২ জন হাত-পা লোহার শিকল দিয়ে পেচিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। 

একই সময় আসামীরা ব্যবসায়ীর ব্যবহৃত দুটি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, নগদ ১৫’শত টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। 

শুদু তাই নয় মামুন গলায় ছুরি ধরে ব্যবসায়ীর ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়।

এরপর কোন ক্রমে ভুক্তভোগী তার বাবাকে মোবাইল ফোনে মাধ্যমে জানায় সে অপহরণ হয়েছে এবং অপহরণকারীরা তাকে একটি বিল্ডিংয়ে আটকে রেখেছে।  ওই সময় আসামীরা ব্যবসায়ীর হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তার বাবাকে বলে, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে যদি আপনার ছেলেকে বাঁচাতে চান তাহলে নগদ ৫লাখ টাকা নিয়ে আসেন। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য অপহরণকারীদের দেয়া শর্তে রাজি হয়ে ওইদিনই দুপুরে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং অপহরণকারীরা পথি মধ্যে ব্যবসায়ীর বাবার সাথে মোবাইল ফোনে ঘনঘন যোগাযোগ করতে থাকে ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতে বলে। সর্বশেষ আসামী এমরান তার বাবাকে কল করে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ্ থানাধীন ইস্পাহানি ১নং রেলগেইট সংলগ্ন স্পীড ট্রেক (প্রাঃ) লিমিটেড সিএনজি পাম্পের বিপরীত পাশে রাত সাড়ে ১০টায় নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে একা আসতে বলে।

এ ঘটনা অপহরণের বিস্তারিত বিষয়টি অপহৃত ব্যবসায়ীর বাবা র‌্যাব-৭, চটগ্রামকে অবহিত করেন। 

বিষয়টি অত্যান্ত মানবিকতার সহিত আমলে নিয়ে ভুক্তভোগীর বাবার দেয়া তথ্য মতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। 

এরপর বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় অপহরনকারীদের কথা ও র‌্যাবের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগীর বাবা কথিত টাকার ব্যাগসহ আসামীদের দেয়া ঠিকানায় গিয়ে দাড়িয়ে ৪/৫ মিনিট অপেক্ষা করতেই অপহরণ দলের একজন সদস্য ভুক্তভোগীর বাবাকে আমজাদের বাবা কিনা জিজ্ঞাসা করে। 

তখন ভিকটিমের বাবা আমজাদের বাবা বলে পরিচয় দেয়া মাত্রই অপহরণকারী তার হাতে থাকা ব্যাগটি নিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা কালে র‌্যাব-৭, এর একটি আভিযানিক দল অপহরণকারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। 

আটককৃত অপহরণকারী এমরান হোসেন সজিব জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, অল্প কিছু দুরেই আড়ালে অপহরনকারী দলের অন্য সদস্যরা ও তাদের সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা ২জন অপহৃত আমজাদকে নিয়ে একটি গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্ণিত স্থান এবং আশপাশ এলাকা ব্যাপক তল্লাশী অভিযান চালায়। কিন্তু অন্যান্য সদস্যরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহৃত ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। 

আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে উপরোক্ত ঘটনার সাথে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সরাসরি জড়িত থাকার কথা নিজ মুখে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশ্হা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র‌্যাব-৭, এর এই মুখপাত্র।