২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন


নিয়ামতপুরে ৩১ জানুয়ারী নির্বাচন প্রার্থী ও ভোটারদের নানান ভাবনা কে হাসবেন বিজয়ের হাসি
মোঃ জাবেদ আলী নিয়ামতপুর উপজেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০১-২০২২
নিয়ামতপুরে ৩১ জানুয়ারী নির্বাচন প্রার্থী ও ভোটারদের নানান ভাবনা কে হাসবেন বিজয়ের হাসি নিয়ামতপুরে ৩১ জানুয়ারী নির্বাচন প্রার্থী ও ভোটারদের নানান ভাবনা কে হাসবেন বিজয়ের হাসি


শেষ পর্যায়ে জমে উঠেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। চলছে মিছিল, মিটিং ও পথসভা, উঠান বৈঠক, মাইকিং। প্রার্থী ও তাদের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচন নিয়ে তুমুল উৎসাহ ও কৌতূহল বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। এই ভোট নিয়ে উপজলার বাইরের লোকদের মধ্যেও আগ্রহের কমতি নেই।

এই ভোটে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখানোর জন্য মুখিয়ে আছে ভোটাররা। তাদের চোখ এখন আগামী ৩১ জানুয়ারির দিকে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কে জিতবে তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনের শেষ সময়ের প্রচারণা এখন চরম পর্যায়ে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোট-খাট কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই সকল প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এরি মধ্যে ভাবিচা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম (আনারস)  নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিকবার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, পোষ্টার লাগাতে না দেওয়া, প্রচার-প্রচারণাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তেমনি একই অভিযোগ তুলেছেন নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম (ঘোড়া), বাহাদুরপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রঞ্জু রহমান ( আনারস), রসুলপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারূল ইসলাম রবু (আনারস)। অপর দিকে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী  (নৌকা)  ইভিএম উপজেলার সবকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে। 

হাজিনগর ইউনিয়ন লড়াই হবে দ্বিমুখী। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা) যিনি বর্তমান ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ভিপির সাথে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজুল ইসলাম (আওয়ামী পন্থি) মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে না পারলেও নৌকা প্রার্থীর কিছু ভোট সে পাবে এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম একটু ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে হাসবেন বিজয়ের হাসি তা চুড়ান্ত হবে ৩১ জানুয়ারী। এ ইউনিয়নে চার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আব্দুর রাজ্জাক  (নৌকা), আমিনুল ইসলাম (আনারস), মিনহাজুল ইসলাম  (ঘোড়া), আবুল বাশার ( হাতপাখা)। ৩৬টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হাজিনগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২২ হাজার ১শ ৯১জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ১শ ৫৪ এবং মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৩৭ জন।

চন্দননগর ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান তোতা ( নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী অত্র ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদি ( ঘোড়া) এবং তরুন প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শিমুল (আনারস )। আওয়ামীলীগের অনেক নেতা কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী  বদিউজ্জামান ও দেলোয়ার হোসেন শিমুলের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সাধারণ ভোটারদের ধারণা আওয়ামীলীগের কিছু ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে চলে যাওয়ায় বেকায়দায় রয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতা। আর এই ইউনিয়নে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় বিএনপির সমর্থিত ভোটাররা নৌকা ঠেকাও নীতিতে অবস্থান করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদি ( ঘোড়া) কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুন নেতৃত্ব দেলোয়ার হোসেন শিমুলও কম যায় না। সেও বাঘ-সিংহের লড়াই এর ফাঁকে বেরিয়ে আসতে পারেন। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত। চন্দননগর ইউনিয়নে পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ( নৌকা) খালেকুজ্জামান তোতা, স্বতন্ত্র প্রার্থী  বদিউজ্জামান বদি ( ঘোড়া), দেলোয়ার হোসেন শিমুল ( আনারস), বদিউজ্জামান (চশমা), জাকারিয়া (মটরসাইকেল)।  চন্দননগর ইউনিয়ন ৩৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২১ হাজার ২শ ১১ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৫শ ৫৭ এবং মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৬শ ৫৪ জন।

ভাবিচা ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বিমুখী। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওবাইদুল হক (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম (আনারস) এর মাঝে। সাধারণ ভোটারদের ধারণা যদি সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট ও ফলাফল হয় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম কিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ইউনিয়নে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় এবং বিএনপির বেশির ভাগ ভোটার ও সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়র শরিফুল ইসলামের পক্ষ নিয়েছে। তাই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। সরকার দল ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না, তাই আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান না হলে এলাকায় কোন কাজ হবে না। ইউনিয়নের সচেতন ভোটাররা এমনটাই মনে করছেন। সেদিক দিয়ে তারা মনে করছেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থীই বিজয়ী হবেন। তবে চুড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে ৩১ জানুয়ারী। এ ইউনিয়নে সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওবাইদল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফুল ইসলাম ( আনারস), আব্দুল বারী (চশমা), দেলোয়ার হোসেন (মটরসাইকেল), জসিমউদ্দিন (হাতপাখা), জহিরুল ইসলাম  ঘোড়া) ও  জামশেদ আলী (অটো রিক্সা)। ৩৮ টি গ্রাম নিয়ে ভাবিচা ইউনিয়ন গঠিত। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৬ হাজার ৭শ ৭৭, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ১শ ৩৪ এবং মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৬শ ৪৩ জন।

নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বজলুর রহমান নঈম(নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম রেজা চৌধুরী বাদশা (আনারস) ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলামের ( ঘোড়া) মধ্যে। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বজলুর রহমান নঈমের অবস্থান দৃশ্যত ভালো মনে হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী পন্থি শহিদুল ইসলামও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগের ভোট দুভাগে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুবিধা নিতে পারে বিএনপি পন্থি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম রেজা চৌধুরী বাদশা। অনেকের ধারণা আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগ এ লড়াইয়ে বিএনপি পন্থি শামীম রেজা চৌধুরী বাদশা বিজয়ী হতে পারেন, অবশ্য যদি ভোট ও ফলাফল সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ হয়। তবে বেশীরভাগ ভোটার মনে করছেন উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যানের বিকল্প নেই। তাই সচেতন ভোটাররা মনে করছেন বজলুর রহমান নঈমকেই বিজয়ী করতে হবে। এ ইউনিয়নে সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বজলুর রহমান নঈম ( নৌকা), শামীম রেজা চৌধুরী (আনারস), শহিদুল ইসলাম (ঘোড়া), আমিনুর রহমান (মটরসাইকেল), আব্দুর রহমান (চশমা), একরামুল হক (হাতপাখা)। এ ইউনিয়ন ৩৬টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার ২১ হাজার ৬শ ২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৪শ ৫৮ এবং মহিলা ভোটার ১১ হাজার ১শ ৬২জন।

রাজশাহীর সময় /এএইচ