২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪:৫৭ অপরাহ্ন


ম্যাচের মাঝেই চোটে পড়লেন জেরেভ, ফাইনালে নাদাল
ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২২
ম্যাচের মাঝেই চোটে পড়লেন জেরেভ, ফাইনালে নাদাল ফাইল ফটো


প্যারিসের লাল সুরকির কোর্টে চলছে তখন ফাইনালে ওঠার লড়াই। প্রায় তিন ঘণ্টা গড়িয়ে গেছে ম্যাচ। হঠাৎই খেলার মাঝে কোর্টে শুয়ে পড়লেন আলেকজান্ডার জেরেভ। চোট পেয়েছেন তিনি। আঘাত এতটাই গুরুতর যে দাঁড়াতেই পারছিলেন না এই জার্মান তারকা।

শেষ পর্যন্ত হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোর্ট থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হল তাকে। পরে যখন কোর্টে ফিরলেন; তখন একা একা আর হাঁটতে পারছিলেন তিনি। হাঁটছিলেন ক্রাচে ভর করে। যন্ত্রণায় বিদ্ধ মুখ, চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। চেষ্টা করেও যন্ত্রণার তীব্রতায় কান্না চেপে ধরে রাখতে পারেননি।

শুধু যন্ত্রণা কেন, লড়াই করেও এভাবে চোট পেয়ে বিদায় নেওয়ার ব্যথাও ছিল। শারীরিক অবস্থা দেখে বোঝাই গিয়েছিলো, এই ম্যাচে তার পক্ষে সম্ভবত আর নামা সম্ভব হবে না। শেষ পর্যন্ত হলোও না। জয়ী ঘোষণা করা হলো নাদালকেই। ১৪তমবার ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে পৌঁছে গেলেন লাল দুর্গের রাজা।

নাদালও হয়তো ভাবতে পারেননি, এমন একটা পরিস্থিতির শিকার হবেন। প্রথম সেট গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। ৭-৬ গেমে প্রথম সেট জেতেন নাদাল। দ্বিতীয় সেটও গড়ায় টাইব্রেকারে। সেটের ফল যখন ৬-৬, তখনই চোট পান জেরেভ। একটি বল ঝুঁকে পড়ে রিটার্ন করতে গিয়েই গোড়ালি উল্টে যায় তার। সঙ্গে সঙ্গেই র‌্যাকেট ফেলে কোর্টে শুয়ে পড়েন তিনি। ১৫ হাজার দর্শক তখন প্রায় থমকে দাঁড়িয়েছিল এই দৃশ্য দেখে।

জেরেভকে এভাবে পড়ে যেতে দেখেই কোর্টের অপর প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন নাদাল। মাঠের ধারে যখন জেরেভকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ডাক্তার-ফিজিওরা, তখন তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে পাশে। ডাক্তার এবং ফিজিওদের সাহায্যে কোনোমতে হুইলচেয়ারে বসানো হয় জেরেভকে। লকার রুমে চলে যাওয়ার পর নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন নাদাল। আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার জন্যে তখন অপেক্ষা করছেন আম্পায়ারও।

প্রায় সাত মিনিট পর বেরিয়ে এলেন জেরেভ, দুই বগলের নীচে ধরা ক্রাচ। পাশে কোচ, ফিজিও, ডাক্তার। ছলছলে চোখ, তবু আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা তার। তখনেই ছুটে গেলেন নাদাল। জড়িয়ে ধরলেন জেরেভকে। ততক্ষণে ১৪তম ফরাসি ওপেন ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে নাদালের।

নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নাদাল বললেন, ‘এমন ঘটনা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। তার জন্যে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। প্রতিযোগিতায় অসাধারণ খেলছিল। তাই তার মতো ছেলেকে কাঁদতে দেখা নিঃসন্দেহে কঠিন মুহূর্ত। আশা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। অনেক শুভেচ্ছা থাকল তার প্রতি।”

প্রায় দু’টি সেটই খেলা হল, তাতেই সময় লাগল প্রায় তিন ঘণ্টা। এর আগের দু’টি ম্যাচে চার ঘণ্টার উপর কোর্টে ছিলেন নাদাল। এই ম্যাচও সে দিকেই এগোচ্ছিল প্রায়।

খেলার শুরুটাই ভাল হয়নি নাদালের। প্রথম গেমেই তার সার্ভিক ব্রেক করেন জেরেভ। নিজের পরের দু’টি সার্ভ ধরে রাখেন। কিন্তু নাদালকে বারবার নেটের সামনে এনে খেলানোর চেষ্টা করছিলেন জেরেভ এবং ব্যর্থ হচ্ছিলেন। নোভাক জোকোভিচও একই রাস্তা নিয়েছিলেন, পারেননি।

নাদালকে কেন সুরকির কোর্টের রাজা বলা হয়, সেটা বোঝা গেল একটু পরেই। অষ্টম গেমে তিনি ব্রেক করলেন জেরেভকে। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে এক সময় ৬-২ এগিয়ে গিয়েছিলেন জেরেভ। অর্থাৎ এক পয়েন্ট পেলেই সেট পকেটে। সেখান থেকে পরপর পাঁচটি পয়েন্ট জিতে খেলার গতিপথটাই বদলে দিলেন নাদাল। জিতে নিলেন সেটও।

দ্বিতীয় সেটেও শুরুতে নাদালকে ব্রেক করেন জেরেভ। পাল্টা জার্মান প্রতিপক্ষকে ব্রেক করেন নাদাল। দুই খেলোয়াড়ই একে অপরকে এক ইঞ্চি জমি ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। ফলে ম্যাচও এগোচ্ছিল সে ভাবেই। এক-একটি গেম শেষ হতেই সময় লাগছিল অনেকক্ষণ। কিন্তু মাঝখানে জেরেভের চোট তালগোল পাকিয়ে দিল সবকিছু। এ ভাবে জিতবেন, এ ভাবে ফাইনালে উঠবেন ভাবতে পারেননি নাদালও।

রাজশাহীর সময়/এইচ