১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩০:২৫ অপরাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে আরও সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশ সংসদীয় দলের গুরুত্ব আরোপ
নোমান ইবনে সাবিত/বিপি, নিউ ইয়র্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে আরও সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশ সংসদীয় দলের গুরুত্ব আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে আরও সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশ সংসদীয় দলের গুরুত্ব আরোপ


বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সংসদীয় দলের এখানে সফরের দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু এর সাথে তার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসে এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্সের সাথে তার ক্যাপিটল হিলের লংওয়ার্থ অফিসে বৈঠককালে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একটি গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেয়। সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। দলের অন্য সদস্যরা হলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, এমপি; নাহিম রাজ্জাক, এমপি; এবং কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি। এসব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ সহিদুল ইসলামসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এর সঙ্গে বৈঠক

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক  অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু-এর সাথে বৈঠকে, সংসদীয় দলটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

অ্যাম্বাসেডর লু কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনার ভূয়সি প্রশংসা করেন এবং এর ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলে অভিহিত করেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ সহযোগিতাকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে মন্তব্য করে বলেন এসব খাতে দুই দেশ তাদের সহযোগিতা বাড়াতে পারে। উভয় পক্ষ আইসিটি খাতে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সিলিকন ভ্যালি ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছে।

সফররত প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দ্রুত প্রত্যর্পণে বাইডেন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তারা র‌্যাব ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদলের নেতা ফারুক খান দুদেশের জনগনের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ওপর জোর দেন।

শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অবকাঠামো প্রকল্পে বৃহত্তর বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডিএফসি অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ এবং চলমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয় আলোচনায় স্থান পায় l

কংগ্রেসম্যান ইভান্সের সাথে বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্র হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্স ফিলাডেলফিয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। 2019 সালের অক্টোবরে তার বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে কংগ্রেসম্যান ইভান্স আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্রে সফর ওয়াশিংটন-ঢাকা সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তার অব্যাহত সমর্থনের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারিত্বের আশ্বাস দিয়েছেন।

সংসদীয় প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তার প্রশংসা করেছে । তারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমারের উপর মার্কিন সরকারের চাপ অব্যাহত রাখার জন্য কংগ্রেসম্যান ইভান্সকে অনুরোধ করেছেন।

উভয় পক্ষই ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ব্যাপারে একমত  প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

আইআরআই-এ গোলটেবিল বৈঠক

বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাথে একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেয়। আইআরআই-এর প্রেসিডেন্ট ড. ড্যানিয়েল টুইনিং আইআরআই পক্ষের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে আইআরআই-এর এশিয়া বিভাগের পরিচালক জোহানা কাও, ডেপুটি ডিরেক্টর রোন্ডা মেস, সহযোগী পরিচালক ম্যাট কার্টার, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোহুল্লাহ নিয়াজি, বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল উল্লেখ করেছে যে বাংলাদেশ সরকার 2024 সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।  প্রতিনিধি দলটি উল্লেখ করেছে যে সরকারের প্রচেষ্টাকে অন্যান্য সমস্ত রাজনৈতিক দল দ্বারা সমর্থন ও সহায়তা  করা দরকার, কারণ তাদের সকলেরই ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য আইআরআই-এর সহায়তাকে স্বাগত জানান।