২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯:১৭ অপরাহ্ন


বাঘায় ফাঁকা চেকে বিপদে যুবক
মোঃ শাহানুর আলম বাবু, বাঘা( রাজশাহী)প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২২
বাঘায় ফাঁকা চেকে বিপদে যুবক ফাইল ফটো


রাজশাহীর বাঘায় সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসল ও সুদ পরিশোধ করেও বিপদে আরিফুল ইসলাম নামের এক যুবক। সে উপজেলার মোর্শিদপুর গ্রামের দরীদ্র ভ্যানচালক ছমির উদ্দিনের ছেলে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পেলেও ফাঁকা স্বাক্ষর করা  চেকের পাতায় মহা বিপদে পড়েছে আরিফুল।

জানা যায়, আরিফুল ইসলাম স্ত্রীর সীজার করানোসহ সংসারে নানাবিধ অভাব-অনটনের কারনে অন্য কোন উপায়ে টাকা যোগাড় করতে না পেরে  নিরুপায় হয়ে সুদি মহাজনের আশ্রয় নেয়।  সে ৫/৬ মাস পূর্বে  বাঘা পৌর সদর উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের মৃতঃ নুরুল ইসলামের ছেলে সুদ কারবারী সুলতান আলীর নিকট থেকে মাসিক ৩৫% সুদে ৪০ হাজার টাকা কর্জ নেয়। টাকা কর্জ নেবার সময় সুলতান আলীর শর্ত মোতাবেক আরিফুল তাকে অগ্রণী ব্যাংক বাজুবাঘা শাখার দুইটি ফাঁকা চেক সঞ্চয়ি হিসাব নম্বর-০২.....৩৯১৪ , চেক নম্বর-৬০০৪৭৩২ এবং ৬০০৪৭৩৩, একশত টাকা মূল্যমানের  তিন খানা ফাঁকা ষ্ট্যাম্প, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং দুই কপি পার্সপোর্ট সাইজ ছবি প্রদান করেন। উক্ত টাকার বিপরিতে আরিফুল প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রতি মাসে সুলতানকে পরিশোধ করেন। আরিফুল সর্বশেষ  গত ৭ এপ্রিল সুলতান আলীর আসল টাকা ফেরৎ দিয়ে তার নিকট থাকা চেক, ষ্ট্যাম্প সহ জমাকৃত কাগজপত্রাদি ফেরৎ চাই। এ সময় সুলতান আরিফুলের নিকট তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। সুলতানের দাবিকৃত তিন লাখ টাকা দিতে না পারায় একমাস পেরিয়ে গেলেও সুলতান  আরিফুলের  চেক ষ্ট্যাম্প ফেরৎ  দেয় নাই। উপায়ন্তর না পেয়ে  আরিফুল গত ৫ মে চেক ও ষ্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য বাঘা থানায় অভিযোগ করেন। আর এ অভিযোগেই আরও বেশি বিপদে পড়ে যায় আরিফুল। থানায় অভিযোগ দেবার কারনে সুলতান আলী  তার সহযোগী চক ছাতারী গ্রামের মৃত ম্জাদার রহমানের ছেলে বাঘা পৌরসভার ইলেকট্রিশিয়ান মনিরুল ইসলামকে দিয়ে আরিফুলের ফাঁকা চেকে সাড়ে আট লক্ষ টাকার অংক বসিয়ে গত ৯ মে চেক ডিজ অনার করেন। এরপর সুলতান  আরিফুলের আরেকটি ফাঁকা চেকে ২০ লক্ষ টাকা বসিয়ে ডিজ অনার করাসহ মামলা হামলার হুমকি প্রদর্শন করছেন। 

এ বিষয়ে ভুক্তভুগী আরিফুল ইসলাম বলেন, সুলতান আলীর নিকট থেকে আমি সুদে ৪০ হাজার টাকা নেই। গত ৭ এপ্রিল আমি তার পাওনা সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিয়ে তার নিকট থাকা আমার চেক, ষ্ট্যাম্পসহ কাগজ পত্র  ফেরত  চাইলে  সুলতান  আমার নিকট  তিন লক্ষ টাকা পাবে বলে মিথ্যা দাবি করে। তার দাবিকৃত তিন লক্ষ টাকা না দিলে আমার নিকট থেকে বিশ লক্ষ টাকা আদায় করবে এবং আমাকে যেখানে  পাবে সেখানেই মারধর করবে বলেও হুমকি প্রদর্শন করছে।  আমি নিরুপায় হয়ে থানায়  অভিযোগ  দেয়। কিন্ত  থানায় অভিযোগ দেয়ায় সুলতান আলি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার জানমালের চরম ক্ষতি করবে মর্মে  প্রতিদিন হুমকি প্রদর্শন করছেন। এমতাবস্থায় বিষয়টি নিয়ে আমি ও আমার পরিবার  চরম  নিরাপত্তহীনতায় আছি। 

অভিযুক্ত সুলতান আলী এ বিষয়ে বলেন, আমি আরিফুলের নিকট তিন লক্ষ টাকা পাব। আমার টাকা না দেয়ায় আমার সহযোগী পৌরসভার মনির হোসেন আরিফুলের  একটি চেকে সাড়ে আট লক্ষ টাকা বসিয়ে ডিজ অনার করেছি। আরও একটি ফাঁকা চেক আছে। এছাড়াও ফাাঁকা ষ্ট্যাম্প আছে। আপনার কিছু বলার থাকলে মনিরকে  বলুন।

এ বিষয়ে মনির হোসেনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসাবাদ  করলে তিনি বলেন, সুলতান তিন লাখ টাকা পাবে। একটি চেকে সাড়ে আট লাখ টাকা লিখে ডিজ অনার করা হয়েছে। আরেকটি চেক লিখে ডিজ অনার করে কোর্টে মামলা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। যদি কেউ  নিতিমালা বহির্ভূত সুদ বা দাদন ব্যবসা করে তবে তার বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ভিকটিমকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেবার জন্য তদন্তকারি অফিসারকে (এসআই) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

রাজশাহীর সময়/এ