১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:৩৮:৪১ অপরাহ্ন


আজ ঈদ: ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২২
আজ ঈদ: ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ ফাইল ফটো


ঈদ মোবারক, আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন আজ। মাসব্যাপী রোজা রাখার পর মুমিন-মুসলমানদের খুশির দিন আজ। রোজাদার আজ সুন্নাতি আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠবে। পরস্পরকে দেখলে বরকত ও কল্যাণের দোয়ায় একে অপরকে সম্ভাষণ জানাবেন- 'তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম'।

ঈদের দিন সবার ঘরে ঘরে আনন্দ। ধনী-গরিবের ঘরে আনন্দের পরিবেশ তৈরি করতে ইসলাম দিয়েছেন সুন্দর জীবনদর্শন- ফিতরা। আল্লাহ তাআলা এ দিন তার বান্দাকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করে থাকেন। বারবার ইহসান করে থাকেন।

মুমিন মুসলমান আল্লাহর নির্দেশ মেনে রমজান মাসজুড়ে দিনের বেলা বৈধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। দিনের বেলা বৈধ স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত থেকেছেন। আজ থেকে আবার আগের মতো দিনের বেলা খাওয়া ও পান করা বৈধ হলো। মুমিন মুসলমানের আনন্দ উদযাপনের জন্য এ দিনকে সাব্যস্ত করেন। সে কারণে আজ রোজাদার মুমিন মুসলমানের খুশি ও আনন্দ-উৎসবের দিন।

মুমিন মুসলমান আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে ঈদের আনন্দ-উৎসবে ফিতরা প্রদান ও গ্রহণ করে থাকেন। এ নেয়ামত বছর ঘুরে ফিরে আসে। এতে মুমিন মুসলমানের মনে প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এসব কারণে এ দিনের নামকরণ করা হয়েছে 'ঈদুল ফিতর বা রোজা শেষ হওয়ার খুশি বা আনন্দ-উৎসব।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন মুসলমানের আনন্দের জন্য দুই ঈদের ঘোষণা দেন। ঈদের প্রচলনের সে ঘটনাও উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন মদিনাবাসীদের মধ্যে (উৎসব উদযাপনে) বিশেষ দুটি দিন (প্রচলিত) ছিল। সেই দুই দিনে তারা খেলাধুলায় মেতে উঠতো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, (তাদের আনন্দ-উৎসবের) এ দুইটি দিনের তাৎপর্য কী?

মদিনাবাসীরা জানালেন, (হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা জাহেলি (অন্ধকার) যুগ থেকে এ দুই দিন খেলাধুলা (উৎসব) করে আসছি।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা এ দুই দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দু'টি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু’টি হলো-

১. ঈদুল ফিতর ও

২. ঈদুল আজহা।' (আবু দাউদ, নাসাঈ)

তারপর থেকেই প্রতি বছর এ ঈদ ইসলাম ও মুসলমানদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ ঈদ উদযাপন করে আসছে। মাসব্যাপী রোজা পালনের পর শাওয়ালের প্রথম দিন জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে মুসলমান ঈদ উদযাপন করে থাকেন।

ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ঈদের এ আনন্দে একাকার। ঈদ উৎসবের মূল উপজীব্য হচ্ছে ‘মানুষ’। যে মানুষ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম ও কিয়ামের মাধ্যমে ধৈর্য, সংযম, মানবিক ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। যে রোজাদার মুসলমান রমজান মাসব্যাপী সিয়াম পালনে কষ্ট করেছে, এ ঈদ এবং ঈদের আনন্দও ওই রোজাদার মুসলমানের জন্য।

ঈদ হচ্ছে ইসলামি জীবন-দর্শণের সফলতার সম্মিলন। কারণ ঈদ উৎসবের মূলে রয়েছে আত্মার পরিশুদ্ধি এবং চরিত্রিক উন্নতি শুভ সংবাদ। আর এ উৎসবের মাধ্যমেই মানুষে মানুষে ওই শুভ সংবাদ এবং ভালবাসা পরস্পর ভাগাভাগি করে নেয়।

তাদের জন্য আজকের এ উৎসবে বিরাজ করে জান্নাতি পরিবেশ। তাই হিংসা-বিদ্বেষ, ভুলে গিয়ে ঈদ আনন্দে ধনী-গরিব আজ এক কাতারে শামিল। এ ঈদ হোক মানব প্রেমে ঝলসে ওঠার অনন্য অঙ্গীকার।

রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় মানুষের মন হয়ে উঠে উদার, সহমর্মিতাপূর্ণ ও আল্লাহর প্রেমের রঙিন। রমজান মাসে যারা প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পেরেছেন, ঈদের দিন মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।

এজন্য রোজাদারদের জন্য ঈদের এ দিনটি বিরাট এক প্রাপ্তির দিন। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদকে মুসলমানদের জাতীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন-

‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটি হচ্ছে (ঈদুল ফিতর) আমাদের উৎসব’।

রোজা রাখার কষ্টের পর মানুষের মনের সজীবতা ও কোমলতা অটুট রাখার মাধ্যমও হচ্ছে এ ঈদ। তাইতো রমজানের রোজা শেষে খুশির উৎসব পালিত হয়। প্রতি বছর রমজানের রোজা রাখার পর মুসলিম উম্মাহর জন্য সাম্যের বাণী নিয়ে উপস্থিত হয় ঈদুল ফিতর । ঈদের নামাজে একত্রিত হয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।

ঈদগাহে থাকে না কোনো ভেদ-বিদ্বেষ, উঁচু-নিচু। সবাই একই সমতল ভূমিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর সামনে প্রার্থনা করেন। কামনা করেন কল্যাণ ও শান্তির। যেখানে কোনো উঁচু-নিচু মান-মর্যাদার বালাই থাকে না। কেউ আনন্দ-উৎসব, মান-সম্মান ও মর্যাদা থেকে বাদ যায় না। কেউ পিছু হটে না। এ যেন সাম্যের এক অর্পূব দৃশ্যের অবতারণা হয় ঈদগাহে। তাইতো দুনিয়ার এ ঈদগাহ হয়ে উঠে সামাজিক মিলন মেলার শ্রেষ্ঠ আসর।

বছরে অন্তত ঈদের দিনে মানুষ সব ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, তুচ্ছতা, হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরকে ভালবাসে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য, সংহতি ও ভালবাসার নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হয়। আনন্দ উৎসবে প্রবাহিত হয় মানুষ হৃদয়, মন ও দেহে।

সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীও যেন ঈদের আনন্দ থেকে বাদ না যায়; তাদের ঈদের আনন্দ যেন ফিকে হয়ে না যায়; তারাও যেন এক চিলতে আনন্দ উৎসব করতে পারে, সে জন্য ইসলাম সাদকাতুল ফিতরের আবশ্যকীয়তা ঘোষণা করেছে।

সমাজের বিত্তবান লোক তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভাব গ্রস্ত মানুষকে ফিতরা আদায় করবে। গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে ঈদের আনন্দের সুযোগ করে দেবে, এটাই ইসলামের বিধান। তবেই সমাজে পরিপূর্ণ ঈদের আমেজ ফিরে আসবে; সমাজ হয়ে উঠবে আনন্দ মুখর। থাকবে না কোনো মলিন চেহারা । বইবে শান্তি সুবাতাস।

ঈদের দিনের সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তির কামনাই হোক প্রতিটি মুমিন মুসলমানের কামনা। পৃথিবীতে বিরাজ করুক জান্নাতি পরিবেশ। মানবজীবন হয়ে ওঠুক আনন্দময়। মুমিন মুসলমান একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাতে ভালোবাসা বিনিময়ে জানাই-

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَ مِنْكُمْ

উচ্চারণ : ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।

অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার নেকা আমল তথা ভাল কাজগুলো কবুল করুন।’

ঈদ মোবারক...

রাজশাহীর সময়/এএইচ