২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:৪৩:৩৬ অপরাহ্ন


শাবির আন্দোলনে ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে: জাফর ইকবাল
শিক্ষা ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০১-২০২২
শাবির আন্দোলনে ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে: জাফর ইকবাল শাবির আন্দোলনে ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে: জাফর ইকবাল


সম্প্রতি ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের হুমকির কঠোর সমালোচনা করেছেন সাহিত্যিক ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলন শিক্ষার্থীদের  তিনি বলেন, ‘আমাদের এ রকম ভাইস-চ্যান্সেলর আছেন, যাদের আদর্শ এত বেশি যে তারা অন্যের সহমর্মিতায় নিজেরা পদত্যাগ করবেন। আমার ধারণা, আমার এ আশা সহজে মিটবে না। তারা এটা বলেছেন, কারণ ওই ৩৪ জন ভাইস-চ্যান্সেলরের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।’ 

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল শাবিপ্রবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

এর আগে, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ১৬২ ঘণ্টা পর বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২১ মিনিটের দিকে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি ভাঙালেন।  এর কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমারা টের পাচ্ছ না, তোমারা কী করেছ। এটাই আমার দুঃখ। বাংলাদেশ ৩৪টা ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর বলেছেন, এই ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তারা সবাই পদত্যাগ করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যেটা করেছ, আমি আশা করি এর থেকে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোর একটা মোডিফিকেশন হয়েছে। সবাই যেন এখন নতুন করে অ্যানালাইসিস করে যে, আমি যে মানুষটাকে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে পাঠিয়েছি, তিনি কি আসলেই ভাইস-চ্যান্সেলর হওয়ার যোগ্য?’ 

জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘আমি অনেক কিছু জানি, কিন্তু পাবলিকলি বলতে চাই না। কারণ নিজেদের দুর্বলতার কথা বলতে ভালো লাগে না। তোমাদের শুধু এটুকু বলতে চাই, তোমরা যেটা করেছ, এর কোনো তুলনা নেই। যে আন্দোলনটা তৈরি করেছ, বাংলাদেশের প্রতিটি যুবক ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।’ 

পুলিশের ওপর শিক্ষার্থীদের গুলি ছোড়ার  অভিযোগের বিষয়ে অভিযোগকারীদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার ছাত্ররা গুলি করেছে, আমাকে একটা ছবি দেখান। সবার কাছে একটা স্মার্টফোন থাকে। একটা ছবি অন্তত দেখান যে ওরা গুলি করেছে।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার অভিযোগে যেসব সাবেক শিক্ষার্থীর  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘সব মামলা তুলে নেওয়া হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যেভাবে কথা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হবে।’

এর আগে বুধবার ভোর রাতে ক্যাম্পাসে পৌঁছান শাবির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন। এ সময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কথা শুনেন। একপর্যায়ে,আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। এ সময় অনশনকারীরা তাদের কথা মতো অনশন ভাঙতে রাজি হন। তবে হাসপাতালে অবস্থানরত অনশনকারীদেরসহ সবাই একসঙ্গে অনশন ভাঙবেন বলে জানান তারা। এররে হাসপাতালে থাকা অন্যান্য অনশনকারী ভিসির বাসভবনের সামনে একত্রিত হলে অধ্যাপক জাফর ইকবাল অনশনকারী শিক্ষার্থী হামিদা আব্বাসিকে পানি পানের মাধ্যমে অনশন ভাঙান। 

আন্দেলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে একজন আন্দোলনকারী জানান, অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আনুষঙ্গিক কাজ  শেষে তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) হতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলার সময় ১৬ জানুয়ারি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এসময়  শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা হলে তা বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে  ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপরও তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ১৯ জানুয়ারি দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

রাজশাহীর সময় /এএইচ