২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৭:০৫:৪২ অপরাহ্ন


যেসব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৪-২০২২
যেসব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ ফাইল ফটো


সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়। সেগুলো কোন নিয়মে ফরজ, তা জানাচ্ছেন মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সোনা-রুপা: সোনা-রুপার অলংকার সব সময় বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহৃত না হোক, সর্বাবস্থায় তার জাকাত দিতে হবে। (সুনানে আবি দাউদ : ১/২৫৫)।

ব্যাংকে সঞ্চয়কৃত টাকা: কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়ের জন্য যদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, তাহলে ঋণমুক্ত অবস্থায় যেদিন তার জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হবে, সেদিন থেকে এক বছর পূর্ণ হলে ওই টাকার ওপর জাকাত দিতে হবে। (ফাতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/২৭০)।

ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, শেয়ার: ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও জাকাত ফরজ। টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত ফরজ। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৭)।

হজ, ঘরবাড়ি ও বিয়ের জন্য জমানো অর্থ: হজের উদ্দেশে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়েশাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়, তাতেও জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১০৩২৫)।

ব্যবসার নিয়তে ক্রয়কৃত জিনিস: ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক, যেমন—জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি, যেমন—মুদিসামগ্রী, কাপড়চোপড়, অলংকার, নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বই-পুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্যিক পণ্য বলে গণ্য হবে। মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭১০৩)।

দোকানপাটের বাণিজ্যিক পণ্য: দোকানপাটে যা কিছু বিক্রির উদ্দেশে রাখা থাকে, তা বাণিজ্যিক পণ্য। এর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে জাকাত আদায় করা ফরজ। (সুনানে আবি দাউদ : ১/২১৮)।

দোকানের সামগ্রী: দোকানের ডেকোরেশন, আলমারি, তাক ইত্যাদি মূল্যের ওপর জাকাত ফরজ নয়; বরং সেল বা বিক্রি করার জন্য যেসব পণ্য বিদ্যমান, তার মূল্য যদি নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তাতে জাকাত ফরজ হবে।

ব্যবসায়িক ভূমি বা প্লট: যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশে ভূমি বা প্লট ক্রয় করা হয়, তাহলে প্রতিবছর ভূমি বা প্লটের বাজারমূল্য বিবেচনা করে জাকাত দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ—কেউ যদি পাঁচ লাখ টাকায় পাঁচটি প্লট ক্রয় করে, তারপর এক বছরের মাথায় ওই প্লটের বাজারমূল্য সাত লাখ হয়ে যায়, তাহলে তাকে সাত লাখ টাকার জাকাত দিতে হবে।

বসবাস বা এমনিতে ক্রয়কৃত প্লট: যদি নিজের বসবাসের জন্য ক্রয় করা হয়, তাহলে ওই প্লটের জাকাত দিতে হবে না। তা ছাড়া ব্যবসা বা বসবাসের উদ্দেশ্য ছাড়া এমনিতে ক্রয় করলেও ওই জমি বা প্লটের জাকাত দিতে হবে না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৩/২৮৪)।

বাড়ি ভাড়া: ভাড়া দেওয়ার জন্য যে বাড়ি করা হয়, তার ভাড়ার ওপর জাকাত আসবে; মূল বাড়ির মূল্যের ওপর জাকাত আসবে না। বার্ষিক বাড়ি ভাড়া যদি সার্বিক খরচের অতিরিক্ত হয়ে জাকাতের নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার জাকাত দিতে হবে।

জাকাত হিসাব করার পদ্ধতি: বছরের একটা সময় দিন-তারিখ নির্ধারণ করে দোকানে বিদ্যমান পণ্যের মূল্যের হিসাব করে দেখা গেল, পাঁচ লাখ টাকার পণ্য আছে। অতঃপর ওই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আবার আনুমানিক পণ্যের মূল্য ধরে দেখা গেল, শুরুতে যে পরিমাণ সম্পদ ছিল, তা নেসাব পরিমাণ। আবার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যে পণ্য আছে, তাও নেসাব পরিমাণ, তাহলে সমুদয় সম্পদের আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ৩/১৮২)।

পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হলে: যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্যে কোনোটি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এই পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সব সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭০৮১)।

রাজশাহীর সময়/এএইচ