নাটোরে স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হককে (৪৫) আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে নাটোর জেলা জজ আদালত অঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে বলে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান।
নাটোরে স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হককে (৪৫) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হোন বরখাস্ত হওয়া এই পুলিশ সুপার।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা তাকে হাজতখানায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
এদিন নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামি ফজলুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মো. আব্দুল কাদের মিয়া।
এর আগে ফজলুল হক ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ছিলেন। পরে তাকে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। তিনি নাটোর সদর উপজেলার জংলী গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হকের স্ত্রী মেহেনাজ আক্তার (৪২) গত বছরের ২৮ অক্টোবর আদালতে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসাইন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেন। তদন্তে স্ত্রীর করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। গতকাল সোমবার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত পুলিশ ট্রাইব্যুনাল থেকে ফজলুর রহমানকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকেরা তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তিন সাংবাদিক বারান্দার মেঝেতে পড়ে যান। কয়েকটি ভিডিও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ দ্রুত তাকে হাজতখানার ভেতরে ঢোকান।
খবর পেয়ে শহরের অন্য সাংবাদিকেরা আদালতে ছুটে আসেন। তারা ঘটনার বিচারের দাবিতে হাজতখানার সামনে অবস্থান নেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সাংবাদিকেরা তাকে একজন সাধারণ কয়েদির মর্যাদায় হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হলে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকসহ উপস্থিত লোকজন ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন।
এই হামলায় আহত হোন- সময় টেলিভিশন, এখন টেলিভিশন, দেশ টিভি, এনটিভিসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক। তারা বলেন, অন্য আসামির মতো তারা বরখাস্ত ওই পুলিশ সুপারের ছবি তুলছিলেন। হঠাৎ তিনি তাদের দিকে তেড়ে আসেন এবং কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। কেউ কেউ নিচে পড়ে যান। মুঠোফোন ও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে তারা আসামি ফজলুল হককে কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তারাও ধারণা করতে পারেননি, তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হবেন।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, আমরা ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমরা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করতে চাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইনের সঙ্গে জেলার সাংবাদিকেরা বিষয়টি নিয়ে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত একজন বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তাকে তারা পুলিশ হিসেবে দেখছেন না। তিনি আদালতের নির্দেশে কয়েদি। তার দ্বারা সাংবাদিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।