২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:১৭:০৬ অপরাহ্ন


তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত রাজশাহীর জনজীবন, রেকর্ড তাপমাত্রা
মঈনউদ্দীন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২২
তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত রাজশাহীর জনজীবন, রেকর্ড তাপমাত্রা তীব্র তাপদাহ, ওষ্ঠাগত রাজশাহীর জনজীবন, রেকর্ড তাপমাত্রা । ছবি-রাজশাহীর সময়


বৈশাখের শুরুতেই প্রখর সূর্য্যের তাপ আর লু-হাওয়ায় রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। এতে রাজশাহীর জনজীবন একেবারেই ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর বিকেল ৩টার দিকেও একই তাপমাত্রা ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ আট বছর পর তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়ালো। এরআগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাই দেশের সর্বোচ্চ এ তাপমাত্রায় পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে আজ অসহনীয় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। অব্যাহত তাপ প্রবাহে মানুষের জীবন যেন যায় যায় করছে। অগ্নিদহনে পুড়ছে সবুজ রাজশাহী। বাতাসে যেন অনুভূত হচ্ছে আগুনের হলকা। সকাল থেকে দুপুর গড়াতেই তেতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বেরহলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বোরো ধান। ওষ্ঠাগত গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।

মৌসুমের টানা তাপদাহে হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। মরু অঞ্চলের মতো যেন লু হাওয়া বইছে এখানে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে তীব্র হচ্ছে পানির সঙ্কট। অস্বস্তিকর এ খরায়শহর ও গ্রামের দিন-মজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণবায়ু যেন যায় যায় অবস্থা।

আর এ দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। ঘরের বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা, উপর থেকে যেন আগুনই নামছে। তীব্র গরমে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, মার্চের মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত একই মাত্রায় তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর উপর দিয়ে। এরমধ্যে গত ৪ এপ্রিল মাত্র ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরআগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও খরাপ্রবণ এলাকা রাজশাহীতে তার দেখা নেই। রাজশাহীর উপর দিয়ে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মাঝারি তাপপ্রবাহ রাজশাহীতে আজ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এরআগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি।

১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এরমধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজশাহীর সময়/এএইচ