রাজশাহী নগরজুড়ে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ শহরে গণপরিবহন বলতে শুধু রিকশা আর অটোরিকশা। এই রিকশা-অটোরিকশার চাপেই সড়কে সময় নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর। এ পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছেন রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তার সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
রাজশাহী মহানগরীর সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও উক্ত এলাকার যানজট নিরসনে রাজশাহীর সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম ও সাহেব বাজার কেন্দ্রিক মার্কেটসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের আলোচনা সভা হয়। আলোচনার পর সাহেব বাজারে যানজট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিয়েছে আরএমপি। শনিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর হবে।
১। মূল সড়কের দুপাশে এবং শপিং মলের সামনে কোনও গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।২। সাহেব বাজার বড় মসজিদের সামনের খালি জায়গা শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং এর জন্য ব্যবহার হবে। কোনও হকার থাকবে না।৩। সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে গনকপাডা মোড় পর্যন্ত রাস্তার ডানপাশে ভ্রাম্যমাণ হকার/ দোকান বসতে পারবে।৪। সোনাদিঘির মসজিদ মোড় থেকে ➡ সমবায় মার্কেট রোড হয়ে ➡ আনাস মঞ্জিল থেকে বামদিকে গণকপাডা মোড় পর্যন্ত একমুখী যানবাহন চলাচল করবে।৫। মালোপাডা সড়ক থেকে সমবায় মার্কেট রোড সংযোগ সড়ক (বিএনপি অফিস ও ভুবন মোহন পার্কের পাশের রাস্তায়) একমুখী যানবাহন চলাচল করবে➡৬। গনকপাডা মোড় হতে কোনো গাড়ি সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের দিকে আসতে পাববে না। সাহেব বাজারমুখী গাড়িসমূহ গনকপাডা রোড দিয়ে ঘুরে আসবে।
এসব নির্দেশনা মেনে চলতে নগরবাসীদের অনুরোধ করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আরএমপি ট্রাফিক পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে মধ্য শহরের সাহেববাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও যানজট আগে তেমন ছিল না। এখন শহরের চারটি পয়েন্টে রেললাইনের ওপর দিয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। ফলে একটি সড়কের কোথাও একেবারে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোথাও রিকশা-অটোরিকশা চলছে সংকীর্ণ পথ দিয়ে। অনেক যানবাহনই আবার বিকল্প সড়ক বেছে নিচ্ছে। ফলে শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।
শহরজুড়ে যানজটের অন্যতম কারণ একসঙ্গে অতিরিক্ত রিকশা-অটোরিকশা রাস্তায় নেমে যাওয়া। যানজট নিয়ন্ত্রণে আগে শহরের অটোরিকশাগুলোকে মেরুন ও সবুজ রং করে দেওয়া হয়েছিল। কোন রঙের অটোরিকশা কখন চলবে এর সময় নির্ধারণ ছিল। সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়লে সব অটোরিকশাই একসঙ্গে সড়কে চলাচল শুরু করে। এতে অটোরিকশার অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। আবার উড়াল সেতুর কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সড়ক বন্ধ রয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম জোহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক ও লেখক সরদার আবদুর রহমান, হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান লাভলু, গণতন্ত্র মঞ্চ রাজশাহীর বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, পরিবেশকর্মী নাজমুল হোসেন রাজুসহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। পুলিশ কমিশনার সেদিন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার তিনি নিজেই মাঠে নামবেন বলে জানান। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) তিনি শহর ঘুরে দেখেন।