২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন


ফ্লোরিডার মায়ামিতে দু'দফায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্বোধন
বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২২
ফ্লোরিডার মায়ামিতে দু'দফায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্বোধন ফ্লোরিডার মায়ামিতে দু'দফায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্বোধন


একমাসে দু'বার উদ্বোধন করা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে বাংলাদেশ দূতাবাস। স্থানীয় সময় বুধবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেল উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ১৪ মার্চ মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেলের উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেই থেকে প্রাথমিকভাবে স্বল্প কার্যদিবসের জন্য কনস্যুলেট সেবা প্রদান শুরু করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেল উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে আগামীতে তা আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রেরিত শুভেচ্ছা বার্তা অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান ড. মোমেন। এসময় জো বাইডেনের চিঠির ভাষ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি লিখেছেন: ৪ এপ্রিল আমরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছি যা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বাংলাদেশের মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, দেশকে সমৃদ্ধ করা, উদ্ভাবনী কর্মপ্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি মডেলে পরিণত হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জো বাইডেন তার চিঠিতে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারীত্বের সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে নি:সন্দেহে আরও শক্তিশালী হবে।

মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেল উদ্বোধন উপলক্ষে ফ্লোরিডায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্লোরিডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে প্রধানমন্ত্রী মায়ামিতে বাংলাদেশের এই কনসুলেট জেনারেল স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। এই কনসুলেট জেনারেল স্থাপনের ফলে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের কনসুলার সেবা প্রদান আরও সহজ ও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরপর কনসুলেটে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে ফিতা কেটে কনসুলেট জেনারেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন মায়ামিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম ছাড়া মায়ামির আশপাশের কয়েকটি সিটির মেয়র শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মায়ামির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় পাঁচ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা উল্লেখ করেছেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে জাতিসংঘের অধিবেশনে এসে এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ফ্লোরিডায় একটি স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস চালুর ঘোষনা দিয়েছিলেন।

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ফ্লোরিডার মায়ামিতে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিসের অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত বৈঠকে বলা হয় কূটনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। এ জন্য ফ্লোরিডায় একটি কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন প্রয়োজন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তিনটি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। এগুলো ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লস এঞ্জেলেসে অবস্থিত।

বিশাল আয়তনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পর্যাপ্ত কনস্যুলার সেবা দেওয়া এই তিন মিশনের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এতে করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বল্পতম সময়ে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব করেছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হলো ফ্লোরিডা। এখানে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফ্লোরিডার দূরত্ব প্রায় এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসেতে কনস্যুলার সেবা গ্রহণ করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।

ফ্লোরিডাতে বিশ্বের ৮১টি দেশের কনস্যুলেট রয়েছে। যার মধ্যে ৬১টি কনস্যুলেটই মায়ামি শহরে অবস্থিত। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার মায়ামি শহরে বাংলাদেশের একটি কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন করা হলে, তা ফ্লোরিডাতে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

ফ্লোরিডায় নতুন কনস্যুলেট জেনারেল প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে উক্ত বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, সাউথ ফ্লোরিডাবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে মায়ামিতে একটি স্থায়ী কনস্যুলেট স্থাপনের চেষ্টা করে আসছিলেন। করোনা-পূর্ববর্তী সময়কালে ২০১৯ সালে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ায় মায়ামিতে কনস্যুলেট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তারপর দীর্ঘদিন সেটির বাস্তবায়নে নানা কার্যক্রমে আটকে ছিল।

এ বছরের শুরুর দিকে একজন কনসাল জেনারেল ও একজন অ্যাকাউটেন্ট মায়ামিতে পোস্টিং পান। তারপর তারা স্থায়ী অফিস নেন। পরবর্তীতে আরো কয়েকজন নিয়োগ পান। কনসাল জেনারেল হিসেবে মিলান কনস্যুলেট থেকে যোগ দেন অ্যাম্বাসেডর ইকবাল আহমদ। ইতোমধ্যেই কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে সেবা দেয়ার সময়সূচিও প্রকাশ করা হয়েছে।

রাজশাহীর সময় / এম আর