২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৪:১২:৩৮ পূর্বাহ্ন


গণঅভ্যুত্থানে ১৭ কারাগারে বিদ্রোহ, এখনো পলাতক ৫শ বন্দি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২৪
গণঅভ্যুত্থানে ১৭ কারাগারে বিদ্রোহ, এখনো পলাতক ৫শ বন্দি ফাইল ফটো


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ও পরে দেশের কারাগারগুলোতে ১৭টি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। কারা সূত্রে জানা যায়, এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে নিহত হন ১৩ জন বন্দি। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার বন্দি পালিয়ে যান। পরে অনেকেই ফিরে আসলেও এখনো ৫০০ বন্দি পলাতক রয়েছে।

কারা বিদ্রোহের প্রথম ঘটনা ঘটে নরসিংদীতে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ওই কারাগারে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাঁচজন কারারক্ষী আহত হন।

কারাগারে থেকে ফাঁসির আসামি জঙ্গিসহ পালিয়ে যান ৮২৬ জন বন্দি। কারাগারজুড়ে অগ্নিসংযোগ করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিও নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় অনেক বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে না চাইলে তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়।

ঘটনার পর অনেক বন্দি আবার কারাগারে ফিরে আসেন। কিন্তু দুই দিন পর্যন্ত তাদের কারাগারে নিয়ে রাখার মতো অবস্থা ছিল না।

কারা সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় ১৭টি কারাগারের মধ্যে আটটি কারাগার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচটি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়েছেন। কারাগার থেকে জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯৮ জন পালিয়ে যান। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিলেন ৯ জন। এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মতো বিচারাধীন জঙ্গি পলাতক রয়েছেন।

এ ছাড়া খোয়া যাওয়া ৬৫টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো ২৭টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কারাগারে বিশৃঙ্খলায় ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন জানান, কারাগার থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো উদ্ধার হয়নি, সেগুলো উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযান চলছে।

কারা সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর বিটিভিতে দেখে জেল থেকে পালাতে বিক্ষোভ করতে থাকেন বন্দিরা। ৬ আগস্ট সফলও হয় অন্তত দেড় হাজার বন্দি। সাতক্ষীরা, শেরপুর ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে দেড় হাজার বন্দি পালিয়ে যান। এর আগে ১৯ জুলাই নরসিংদীর কারাগার থেকে পালিয়ে যান ৮২৬ জন বন্দি।

কারাগারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে কাশিমপুর ও জামালপুর কারাগারে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদ্রোহ শুরু করেন বন্দিরা। তারা গেট ভেঙে ও দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকাতে যাওয়া বন্দিদের ওপর কারারক্ষীরা গুলি ছোড়েন। গুলিতে ছয় বন্দি নিহত হন। এর পরও কারাগারটি থেকে ২০৯ বন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

একই দিন দুপুরে জামালপুর কারাগারের ভেতর বন্দিরা বিদ্রোহ শুরু করেন। এক পর্যায়ে বন্দিদের দুই পক্ষের মধ্যেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গুলি চালাতে বাধ্য হন। এতে ছয় বন্দির মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরো একজন। এ ঘটনায় জেলার ও তিন কারারক্ষীসহ আরো ১৯ জন আহত হন।

একই দিন কুষ্টিয়া জেলা কারাগার ফটকের তালা ভেঙে শতাধিক বন্দি পালিয়ে গেছেন। বন্দিদের মারধরে প্রায় ২৫ কারারক্ষী আহত হন। অন্যদিকে গত ৭ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে আটক হওয়া আসামিরা রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সিরাজগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সময় অন্য আসামিরাও মুক্ত হওয়ার জন্য কারা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।