২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৪০:০০ অপরাহ্ন


বিনয়ে মর্যাদা বাড়ে
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১০-২০২৪
বিনয়ে মর্যাদা বাড়ে ফাইল ফটো


জান্নাতি মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য নম্রতা ও বিনয়। আল্লাহর নির্দেশের সামনে যারা বিনত হয়, আল্লাহর আনুগত্য করে। আল্লাহর কথা স্মরণ করলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আল্লাহ তার মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَ جِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَ اِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّ عَلٰي رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ.

মুমিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, আর তাদের কাছে যখন তার আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের রবের ওপর নির্ভর করে। (সুরা আনফাল: ২)

আল্লাহর কাছে যারা থাকেন অর্থাৎ ফেরেশতারা, তারাও বিনয়ী। তাদের মধ্যে অহমিকা নেই। আল্লাহর নির্দেশে তারা মানুষের আদিপিতা আদমকে (আ.) সম্মানসূচক সিজদা করেছিলেন। আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেন,

اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَ يُسَبِّحُوْنَهٗ وَ لَهٗ يَسْجُدُوْنَ.

যারা তোমার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তার ইবাদত থেকে অহংকারে মুখ ফেরায় না। তারা তার তাসবিহ পাঠ করে, তাকেই সিজদা করে। (সুরা আরাফ: ২০৬)

যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। মানুষের অন্তরে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম সৃষ্টি করে দেন। আর যে অহংকার করে আল্লাহর তাআলা তাকে অপমানিত ও হেয় করেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৫৬)

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) একদিন মিম্বরে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে বলেন, লোক সকল! আপনারা বিনয়ী হোন। আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সে নিজেকে নিজে ছোট মনে করে কিন্তু মানুষের চোখে মহান ও সম্মানিত হয়। যে ব্যক্তি অহংকার করে, আল্লাহ তাআলা তাকে হেয় করে দেন। সে মানুষের দৃষ্টিতে হয় ছোট- অপাংক্তেয় এবং সে নিজেকে নিজে খুব বড় মনে করে। এমনকি সে শেষ পর্যন্ত মানুষের চোখে কুকুর ও শূকরের চেয়েও অধিক ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয়। (বায়হাকি: ৮১৪০)

আমাদের নবি হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ রাসুল (সা.) এবং মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও তিনি নিজের কাজ নিজে করতেন। ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। স্ত্রী, সন্তান ও কর্মচারীদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন তিনি। নবিজির (সা.) সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তার কোনো স্ত্রী বা কর্মচারীর ওপর কখনও হাত ওঠাননি। আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া তিনি কারো ওপরই হাত ওঠাননি। যে তার ক্ষতি করেছে, তার থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। (সহিহ মুসলিম)

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, রাসুল (সা.) কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো রকম অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলতেন না। মন্দ আচরণের বদলায় তিনি মন্দ আচরণ করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। তারপর কখনো তা উল্লেখও করতেন করতেন না। (শামায়েলে তিরমিজি)

আল্লাহর রাসুলকে (সা.) অনুসরণ করে আমাদের কর্তব্য বিনয়ী ও নম্র হওয়া, অহংকার ত্যাগ করা। অহংকার শয়তানের কাজ। অহংকার কাফেরদের বৈশিষ্ট্য। অহংকারী আল্লাহর হেদায়াত ও রহমত থেকে দূরে থাকে।