১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন


৩০ বছরের চলাচলের রাস্তা অবরুদ্ধ, গৃহবন্দী দুই পরিবার
রাজশাহী প্রতিনিধি, রাজশাহী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৪-২০২২
৩০ বছরের চলাচলের রাস্তা অবরুদ্ধ, গৃহবন্দী দুই পরিবার ৩০ বছরের চলাচলের রাস্তা অবরুদ্ধ, গৃহবন্দী দুই পরিবার


রাজশাহীতে জোড়পূর্বক দুটি বাড়ির প্রবেশ পথে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে দুই পরিবারকে অবরুদ্ধের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী আদালতের আইনজীবী সোমা খাতুনের বিরুদ্ধে। 

বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে নগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ছোট বনগ্রাম মাঝিপুকুর নিউ কলোনি এলাকায় অভিযুক্ত আইনজীবী প্রাচীর তুলে দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করেন। এতে দুই পরিবারের মোট ১৩ জন মানুষ অবরুদ্ধ হয়েছেন।

ওই এলাকায় প্রায় ৩০ বছর আগে আড়াই কাঠা মাটি কিনেছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারী মুরাদ শেখ। ৩০ বছর ধরে নির্বিঘেœই করেছেন বসবাস। তবে গত তিন বছর যাবত বিভিন্নভাবে হয়রানির মধ্যে রেখেছেন আইনজীবী সোমা খাতুন। প্রতিকার করলেই মারধর সহ বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমার ভয় দেখান তিনি।

জানতে চাইলে অবরুদ্ধ ভুক্তভোগীর স্ত্রী শেফালী খাতুন বলেন, আমার ও পাশের প্রতিবেশীর দুজনের জমির দলিলের নকশা ও চৌহদ্দিতে যাতায়াতের জন্য রাস্তার উল্লেখ রয়েছে। যা প্রায় ৩০ বছর ধরে আমরা ব্যবহার করছি। কিন্তু গত দু’তিন বছর ধরে উকিল হওয়ার পর থেকেই সে উৎপাত শুরু করেছে। 

তিনি আরও বলেন, গত বারের কাউন্সিলর নির্বাচনে তার আপন ফুপাতো ভাই কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে সে আমাদের হয়রানি করতে শুরু করেছে। আবার তার আরেক মামাতো ভাই যুবলীগের বড় নেতা হওয়ার কারণেও সে নানা প্রকারের হুমকি-ধামকি দেয়। এসব ঝামেলার কারণে থানায় একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। সে কারো কথাতে কোনো কর্ণপাত না করেই আজ জোরপূর্বক প্রাচীর তুলে আমাদের অবরুদ্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমরা গৃহবন্দী। 

আরেক ভুক্তভোগী জান্নাতুন ফেরদৌসীর জানান, তিন বছর আগে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী নামের এক আইনজীবীর কাছে থেকে ৩ কাঠা মাটি কেনা হয়। তারপর থেকেই অত্যাচার শুরু করেন। সোমার ক্রয়কৃত মাটি রয়েছে মাত্র তিন কাঠা। অথচ, তিনি তার ক্ষমতার জোরে দখল করেছেন আরও এক কাঠারও বেশি জমি। তা সত্ত্বেও সে আমাদের ন্যায্য রাস্তা যেটা জমির দলিলে রয়েছে সেটি গায়ের জোরে দখল করে আমাদের চলার পথ অবরুদ্ধ করেছেন। 

তিনি বলেন, আমাদের ওই রাস্তায় একটি সরকারি টিউবওয়েল ও ড্রেনও ছিল। সেটি সংস্কারেও আইনজীবী সোমা বাধা দিয়েছে। আর তাই, এনিয়ে আদালতে একটি মামলাও করেছি। আগামীকাল আদালত এবিষয়ে শুনানি দিবেন আশা করছি। 

এবিষয়ে আইনজীবী সোমার মামাতো ভাই ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবু বলেন, আমার বোনের জায়গা সে ঘিরবে না ঘিরবে না সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু তাকে আমি কোনো প্রকারের সমর্থন দেয়নি। উল্টো আমিই তাকে অনুরোধ করে তার একবছর সময় দিয়েছিলাম এর একটি সমাধান করে নেওয়ার জন্য, কিন্তু তারা করেনি। তার মাটি সে ঘিরবে না ঘিরবে না, তা আমি বলতে পারবো না। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন বলেন, ওই রাস্তা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের। সে আমার বোন হোক আর যাই হোক তার ওই রাস্তা ঘেরার এখতিয়ার নেই। তারপরও এঘটনায় অনেক বার বসে মীমাংসা করার জন্য বলেছি। আমার বোন এসব কথা কর্ণপাত না করায় আমি ওই বিষয়ে আর মাথা ঘামাইনি। 

প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী সোমা খাতুন বলেন, আমার দলিলের চৌহদ্দিতে যে জায়গার কথা উল্লেখ রয়েছে তার চেয়েও কম জায়গা নিয়ে আমি আমার সীমানা প্রাচীর তুলছি। বরং তারাই আমার জায়গার দখল করে বাড়ি তুলেছে। তাদের জমির কাগজই জাল-জালিয়াতি করা আছে, আমার নেই। 

আইনজীবী সোমা আরও বলেন, আমি যদি আমার সীমানা প্রাচীর না ঘিরে দেই, তবে আমার বাকি জায়গাও তারা দখলে নেবে। আমার কাজগ-পত্র সব সহি-শুদ্ধ রয়েছে। আর এনিয়ে আদালতে সিভিল মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে আমি তাই মেনে নিবো।

দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমরান আলী বলেন, ঘটনাটি জমি-জাতি সম্পর্কিত সিভিল আইনের বিষয়। আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। তবুও আমি সেখানে ফোর্স প্রেরণ করেছিলাম যাতে সেখানে আইন-শৃংখলা অবনতি না ঘটে। 

তিনি বলেন, এবিষয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। যার বিবাদী হচ্ছেন আইনজীবী সোমা খাতুন এবং বাদী প্রাচীরে ঘেরা ভুক্তভোগী পরিবার। এখন এবিষয়টি আদালতই ফাইসালা করবে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। 

রাজশাহীর সময় / এম আর