২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৯:০০:০৪ অপরাহ্ন


মেয়েদের কপালে টিপ পরা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?
ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট, রাজশাহী:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
মেয়েদের কপালে টিপ পরা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে? মেয়েদের কপালে টিপ পরা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?


নিজেকে সাজাঁতে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। টিপ না পরলে হয়তো সাজাঁটা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু কপালে টিপ পরার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলছে? বিভিন্ন ধরনের লাল, নীল টিপ ব্যবহার করার বিষয়টি ইসলামী শরিয়ত মতে উচিত নয়। এটি ইসলামী আদর্শ বা এর চিন্তাধারার পরিপন্থী কাজ। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে।

নিজেকে সাজাঁতে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। সাঁজার এই উপকরণগুলোর মধ্যে টিপ অন্যতম। কপালে টিপ না পরলে হয়তো সাজাঁটা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু কপালে টিপ পরার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলছে? পবিত্র ইসলাম ধর্মে মেয়েদের কপালে টিপ পরাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ অতীতকালে সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করত তারা কপালে টিপ পরিধান করত। এছাড়াও এর পেছনে একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।

মুসলিম জাহানের পিতা হযরত ঈবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইল পরিমাণ জায়গা আগুন জ্বালালো (নাউযুবিল্লাহ) তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল নমরুদ বাহিনির জালানো আগুন নিয়ে। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে দূর থেকে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। কিন্তু রহমতের ফেরেশতারা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান এসে নমরুদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল যে, সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ (বেশ্যা গিরি) করে এমন কয়েকজন মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারণ এ অবস্থায় রহমতের ফেরেশতারা থাকতে পারবেন না। তাই করা হলো এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চলে গেলেন, আর ঠিক তখনি তারা মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস ওয়াসাল্লাম কে আগুনে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হলো। 

বস্ত্ততঃ এই কঠিন মুহূর্তের পরীক্ষায় জয়লাভ করার পুরস্কার স্বরূপ সাথে সাথে আল্লাহর নির্দেশ এল قُلْنَا يَا نَارُ كُونِيْ بَرْداً وَّسَلاَماً عَلَى إِبْرَاهِيمَ، ‘হে আগুন! ঠান্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের উপরে শান্তিদায়ক হয়ে যাও’ (আম্বিয়া ২১/৬৯)। অতঃপর ইবরাহীম মুক্তি পেলেন।

এরপর আগুন এমনভাবে ঠান্ডা হয়ে গেল যেখানে ইব্রাহীম (আঃ) দীর্ঘ ৭দিন আরামের সাথে কাটিয়েছিলেন।

পরবর্তিতে ঐ বেশ্যা মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল যে পতিতা মেয়েদের কারণে রহমতের ফেরেশতারা চরক ছেড়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন, এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত যা মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে ব্যবহার করে যা সম্পূর্ণ হারাম।

ইব্রাহীম (আঃ) এর জিবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

অতএব যারা বলে যে, মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপ কে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেন, তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছেন তা একবার ভেবে দেখবেন? অশ্লীল পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হত, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে ফ্যাশন। অতএব যারা বলে— মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপকে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করেন, তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছেন তা একবার ভেবে দেখবেন? পতিতার পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হত, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে ফ্যাশন! ওহে! মুসলিম নারীরা, এই সত্য কথাটা জানার পর ও কি আপনি আপনাদের কপালে টিপ পড়বেন?? এছাড়া কপালে টিপ দেয়া বিধর্মীয় সাংস্কৃতিক রীতিতে পরিণত হওয়ায় তা বিধর্মীয় সাথে সম্পৃক্ত হিসাবেই গন্য হয়। আর বিধর্মীয় সংস্কৃতি সম্পৃক্ত কোন বিষয় কোন মুসলমানের জন্য গ্রহন করা জায়েয হতে পারে না । কারো কাছে তা ভাল লাগলে মনে করতে হবে এ ব্যাপারে তার রুচিবোধ নষ্ট হয়ে গেছে । তাই স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য ও কপালে টিপ দেয়া যাবে না । কোনো স্বামী এমনটা চাইলে তাকে বুঝিয়ে এ অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে হবে ।

তথ্যসূত্র : তাফসীরে মা-রেফুল কুরআন, হযরত ইবরাহিম (আঃ) মূলগ্রন্থ, তাবারী, তারীখ, ১খ, ১২৩-১২৪; ছালাবী, আদি গ্রন্থ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠাঃ ৮১, আদি ইসলামী ইতিহাস, ইবনে কাসীর গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান