২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন


নিউ ইয়র্ক প্রবাসী ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলনে, মোহাম্মদ আজিজ
ইমা এলিস/ নিউ ইয়র্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৬-২০২৪
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলনে, মোহাম্মদ আজিজ নিউ ইয়র্ক প্রবাসী ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলনে, মোহাম্মদ আজিজ


ভুয়া ও বানোয়াট খবর প্রকাশ করে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বন্ধ করা যায় না বলে উল্লেখ করেছেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ। সংবাদপত্রকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার হাতিয়ার না বানানোরও আহবান জানান তিনি।  তিনি বলেন ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে মোকাবেলা করা যায় না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ফলে দেশ, জাতি ও সমাজ উপকৃত হয়। প্রবাসের সংবাদকর্মীরাও তাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসবেন। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি সেন্টারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন তিনি।

মোহাম্মদ আজিজ বলেন, নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক আজকাল’  পত্রিকায় গত ২৪ মে, ২০২৪ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ইউর ড্রিম হোম কেয়ারকে কা রণ দর্শাও নোটিশ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদ পরিবেশনের পুর্বে প্রকৃত তথ্য যাচাই না করে মনগড়া, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যযুক্ত সংবাদটি প্রকাশ করায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এছাড়াও প্রকাশিত সংবাদে প্রবাসীদের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির মর্যাদাহানীসহ হেয় করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।  

তিনি বলেন, সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক ও প্রকাশক শাহ্‌ নেওয়াজ শুধু তাকেই লক্ষ্যবস্তু মনে করছে তা নয়, তার প্রতিষ্ঠান ‘ইউর ড্রিম হোম কেয়ার’কে শাহ্‌ নেওয়াজের প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এজ কেয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করেছেন। তাই ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করে তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টা করছেন। অসামাজিক ও মর্যাদাহীন ব্যক্তিরা সমাজে নোংরামি ছড়ানো স্বাভাবিক, কিন্তু যখন কেউ কোন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন তথন ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে অপপ্রচার চালানো মোটেই কাম্য নয়। এর ফলে সংবাদপত্রের ওপর মানুষের যে আস্থা রয়েছে তা হারিয়ে ফেলবে এবং সমাজ থেকে নিক্ষিপ্ত হবে এসব সংবাদপত্র নামের গুজব পত্র।

আজিজ বলেন, সংবাদটি প্রকাশের ৫ দিন পর গত ৩০ মে, ২০২৪ আমার আইনজীবী আজকাল কর্তৃপক্ষকে একটি আইনি নোটিসও পাঠিয়েছেন। কিন্তু আইনজীবীর চিঠির তোয়াক্কা না করে ৩১ মে, ২০২৪ সাপ্তহিক আজকালে 'আজিজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ' শিরোনামে আরও একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদে কেন তাকে পরপর তিনবার বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অথচ তিনি বাংলাদেশ সোসাইটির পরপর দু'বারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। সোসাইটির নির্বাচিত সদস্যরাই তার অবদানের জন্য তাকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আজকালের সাংবাদিক ও কর্তৃপক্ষের এমন ধারণাও নেই যে, তার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে তারা কমিউনিটির ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সোসাইটির বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। অবশ্য তারা বলছেন ‘সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে এসব কথা বলা হয়েছে। তার বিশ্বাস যেসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন তারা কমিউনিটি থেকে নিগৃহিত বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি গত ২৪ মে, ২০২৪ 'ইউর ড্রিম হোম কেয়ারকে কারণ দর্শাও নোটিশ' এবং ৩১ মে, ২০২৪ তারিখে 'আজিজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ দু'টির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বক্তব্যে।    

তিনি গত ২৪ মে, ২০২৪ ‘ইউর ড্রিম হোম কেয়ারকে কারণ দর্শাও নোটিশ' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দেন। খবরের সূত্র হচ্ছে মেসবাহ আবদীন ও ফরিদা ইয়াসমিন। তাদের দায়ের করা তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল প্রকাশিত সংবাদে উক্ত মামলার বিকৃত বয়ান প্রচার করা হয়েছে। মামলায় যে সব বিষয়ে অবতারণা করা হয়েছে তার অনেক কিছুই তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক নাকচ করে আংশিক উদ্ধৃতি দিয়ে তা জারি করা হয়। তবে আদালত তার ব্যবসা বন্ধ করা, কিংবা ব্যবসায় কোনো প্রকার কারচুপির অভিযোগ আমলে নেননি।

মেসবাহ আবেদিনের তথাকথিত মামলাকে উপজীব্য করে সাপ্তাহিক আজকাল আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে, এ প্রসঙ্গে সঠিক তথ্য জানান তিনি। ইউর ড্রিম হোম কেয়ার ২০২২ মালের ৪ আগস্ট আইনজীবীর উপস্থিতিতে মেসবাহ আবেদিন বিক্রি করেন। কিন্তু মেসবাহ আবেদিন সেই বিক্রি পর্বে আইআরএস এর কাছে তার বকেয়া ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের কথা গোপন রাখেন। পরে আজিজ টেকওভার করার পর সেই টাকা পরিশোধ করেন। তারপর থেকে মাত্র ৬৯ জন ক্লায়েন্টের স্থলে তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বর্তমানে হাজারের বেশি ক্লায়েন্ট নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে শাহ নেওয়াজের গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ারসহ অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের অনুদান পেলেও গ্রাহককে সে অনুপাতে টাকা না দেওয়ায় ব্যবসায় ঘাটতি দেখা দেয়। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ রয়েছে অপরিসীম। শাহ্‌ নেওয়াজের মালিকানাধীন পত্রিকার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন বানিয়ে এক দিকে তার প্রতি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তার ব্যবসার ক্ষতিসাধন করছে। এজন্য তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। মামলার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ বলেন, তার নিজের কোনো সংবাদপত্র নেই। যে কোন সংকটকালে সব সময় তিনি ও তার  প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হন। তার আবেদন নিবেদনকে কমিউনিটির স্বার্থে প্রকাশ করা হয়। আজও কতিপয় বিষয়ে কমিউনিটির স্বার্থে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরতে চান। তিনি কমিউনিটির স্বার্থে কাজ করে থাকেন। কমিউনিটিকে তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারেন সেবা দিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন প্রাণভরা ভালোবাসা।

তিনি বলেন, মেসবাহ আবেদিনকে ৩৫ বছর ধরে চেনেন। তিনি তার দীর্ঘদিনের প্রতিবেশি। মেসবাহ তার সাথে যে ধরণের প্রতারণা করেছে তিনি মামলা করলে পরের দিনেই মেসবাহ জেলে যেতো। কিন্তু তার পরিবার ও ছেলে মেয়েদের কথা ভেবে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন নাই আজিজ। তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে সেটিও শাহ নেওয়াজের ইন্ধনেই করেছে বলে উল্লেখ করেন আজিজ। এখন তিনিও মানহানীর মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রকাশিত সংবাদে ব্যক্তিগত আক্রমণের কথা উল্লেখ করে আজিজ বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার জনতার সামনে স্ত্রীর হাতে জুতাপেটা খাওয়া মানুষও এই সমাজের নেতা হয়ে চায়। কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলার আগে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ভেবে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটিকে কটুক্তি করার পর সোসাইটির অন্যতম সদস্য সারোয়ার খান বাবু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি আজিজকে গুলি করে মারার হুমকি  দেন। এসময় উপস্থিত সারোয়ার খান বাবুও সাংবাদিকদের সামনে প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষকে কেউ হত্যার হুমকি দিতে পারেন না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। এ বিষয়ে যদি আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হয় তিনি সাক্ষ্য দিবেন বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মোহাম্মদ আজিজের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ‘ইউর ড্রিম হোম কেয়ারের মিডিয়া পরিচালক জলি আহমেদ। একই প্রতিষ্ঠানের সিইও ফয়সল আজিজ তার বক্তব্যে মেসবাহ আবেদিনের মামলা ও তার ভয়ানক প্রতারণার বর্ণনা তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকর্মী ছাড়াও প্রবাসের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ।