সুরা হাক্কাহ কোরআনের ৬৯তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫২ এবং রুকু সংখ্যা ২। সুরা হাক্কাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সুরা হাক্কাহ শুরু হয়েছে ‘হাক্কাহ’ সম্পর্কে প্রশ্নের মাধ্যমে। ‘হাক্কাহ’ শব্দের মূল অর্থ নিশ্চিত বা বাস্তব বিষয়। এখানে ‘হাক্কাহ’ অর্থ কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন যা অবশ্যম্ভাবি বা নিশ্চিত ঘটনা এবং যেদিন আল্লাহর পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির সতর্কবার্তা বাস্তবায়িত হবে এবং মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারিত হবে।
সুরা হাক্কাহর আলোচ্যবিষয় কেয়ামতের ভয়াবহতা, কোরআন ও ওহির সত্যতা, নবিজির (সা.) রিসালত, কাফেরদের বিভিন্ন অপবাদ, অবিশ্বাস ও পাপাচারের কারণে পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা হাক্কাহর ১-১২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১)
الْحَاقَّةُ
আল-হাক্কাহ।
অবশ্যম্ভাবী সত্য!
(২)
مَا الْحَاقَّةُ
মাল-হাক্কাহ।
কী সেই অবশ্যম্ভাবী সত্য?
(৩)
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحَاقَّةُ
ওয়ামা আদরাকা মাল-হাক্কাহ।
তোমার কি জানা আছে সেই অবশ্যম্ভাবী সত্য কী?
(৪)
كَذَّبَتْ ثَمُودُ وَعَادٌ بِالْقَارِعَةِ
কাযযাবাত সামূদু ওয়া আদুম বিল-কারিআহ।
আদ ও সামুদ জাতি আকস্মিকভাবে সংঘটিতব্য সেই মহাবিপদকে মিথ্যে বলেছিল।
(৫)
فَأَمَّا ثَمُودُ فَأُهْلِكُوا بِالطَّاغِيَةِ
ফাআম্মা সামূদু ফাউহলিকূ বিত্তাগিয়াহ।
ফলে সামূদ সম্প্রদায়, তাদেরকে বিকট শব্দ দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।
(৬)
وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوا بِرِيحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ
ওয়া আম্মা আদুন ফাউহলিকূ বিরীহিন সারসারিন আতিয়াহ।
আর আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা,
(৭)
سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُوماً فَتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَى كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ
সাখখারাহা আলাইহিম সাবআ লাইয়ালিওঁ ওয়া সামানিয়াতা আইইয়ামিন হুসূমান ফাতারাল কাওমা ফীহা সার‘আ কাআন্নাহুম আ‘জাঝু নাখলিন খাবিয়াহ।
যা আল্লাহ তাদের উপর প্রবাহিত রেখেছিলেন সাত রাত, আট দিন বিরামহীনভাবে। তুমি সেখানে থাকলে দেখতে পেতে তারা লুটিয়ে পড়ে আছে ফাঁপা খেজুর কাণ্ডের মত।
(৮)
فَهَلْ تَرَى لَهُمْ مِنْ بَاقِيَةٍ
ফাহাল তারালাহুম মিম বাকিয়াহ।
এখন কি তুমি কি তাদের অবশিষ্ট কিছু দেখতে পাও?
(৯)
وَجَاءَ فِرْعَوْنُ وَمَنْ قَبْلَهُ وَالْمُؤْتَفِكَاتُ بِالْخَاطِئَةِ
ওয়া জাআ ফিরআওনু ওয়া মান কাবলাহূ ওয়াল-মু’তাফিকাতু বিল-খাতিআহ।
ফেরাউন, তার পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে দেওয়া জনপদের অধিবাসীরা পাপাচারে লিপ্ত ছিল। (উল্টে যাওয়া জনপদের অধিবাসীরা বলে নবি লুতের জাতিকে বোঝানো হয়েছে)
(১০)
فَعَصَوْا رَسُولَ رَبِّهِمْ فَأَخَذَهُمْ أَخْذَةً رَابِيَةً
ফাআসাও রাসূলা রাব্বিহিম ফাআখাযাহুম আখযাতার রাবিয়াহ।
তারা তাদের রবের রাসুলকে অমান্য করেছিল। ফলে তিনি তাদের কঠোর শাস্তিতে পাকড়াও করলেন।
(১১)
إِنَّا لَمَّا طَغَا الْمَاءُ حَمَلْنَاكُمْ فِي الْجَارِيَةِ
ইন্না লাম্মা তাগাল-মাউ হামালনাকুম ফিল জারিয়াহ।
যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি তোমাদের নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম।
(১২)
لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةً وَتَعِيَهَا أُذُنٌ وَاعِيَةٌ
লিনাজআলাহা লাকুম তাযকিরাতাওঁ ওয়া তাইয়াহা উযুনুওঁ ওয়াইয়াহ।
যেন এ ঘটনাটিকে আমি তোমাদের জন্য শিক্ষাপ্রদ-স্মারক করে রাখি আর সংরক্ষণকারী কান তা সংরক্ষণ করে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. এই বিশ্বজগতের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। তারপর মানুষ পুনরায় জীবিত হয়ে চূড়ান্ত বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারে সমবেত হবে। আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী বিশ্বাসী ও নেক ব্যক্তিরা জান্নাত লাভ করবে, অবিশ্বাসী ও পাপাচারীরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
২. আদ ও সামুদ জাতি আখেরাতের জীবনকে মিথ্যা মনে করার কারণে আল্লাহর শাস্তির মুখে পড়েছে। আদ জাতি এক বিকট গর্জনে ধ্বংস হয়েছে। সামুদ জাতি ধ্বংস হয়েছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ঝড়ো বাতাসে।
৩. আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি তার প্রেরিত রাসুলদের আনুগত্য করাও মুমিনদের কর্তব্য। কারণ আল্লাহর রাসুলরা আল্লাহর নির্দেশই মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। আল্লাহর রাসুলদের অবাধ্যতা দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কারণ।
৪. আল্লাহর নবি নুহের (আ.) সময়ে আল্লাহর ইচ্ছায় এক ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবী ডুবে গিয়েছিল। পৃথিবীর সব কাফের ও পাপচারী ওই জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ তার নবি নুহসহ (আ.) কিছু বিশ্বাসী বান্দাদের শুধু পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন। এভাবে আল্লাহ পৃথিবী সম্পূর্ণ নতুনভাবে আবাদ করেন। আল্লাহ চাইলে তার জন্য কোনো কিছুই কঠিন নয়।