২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৮:৫৫:২৬ অপরাহ্ন


সুরা কলমে বিচার দিবসের বর্ণনা
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২৪
সুরা কলমে বিচার দিবসের বর্ণনা ফাইল ফটো


সুরা কলম কোরআনের ৬৮তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫২ এবং রুকু সংখ্যা ২। সুরা কলম মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে নাজিল হওয়ার দিক থেকে এটি দ্বিতীয় সুরা, সুরা আলাকের পরই সুরাটি নাজিল হয়। সুরাটির বিষয়বস্তু থেকেও বোঝা যায় যে, এ সুরাটি যে সময় নাযিল হয়েছিলো তখন মক্কা নগরীতে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বিরোধিতা বেশ তীব্র হয়ে উঠেছিলো। তাকে বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হচ্ছিলো।

সুরা কলমের আলোচ্যবিষয় নবিজির (সা.) নবুয়ত, তার উন্নত চরিত্র, মক্কার কিছু কাফেরদের মন্দ চরিত্র, রাসুলের (সা.) প্রতি অপবাদ, আখেরাতে মুমিন ও কাফেরদের পরিণতি ইত্যাদি।

সুরা কলমের ৩৪-৪৩ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

(৩৪)

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ

ইন্না লিলমুত্তাকীনা ইনদা রাব্বিহিম জান্নাতিন নাঈম।

মুত্তাকিদের জন্য তাদের রবে কাছে আছে নেয়ামতপূর্ণ উদ্যানরাজি।

(৩৫)

أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ

আফানাজআলুল মুসলিমীনা কালমুজরিমীন।

আমি কি অনুগতদের অপরাধীদের সমান গণ্য করব?

(৩৬)

مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ

মা লাকুম কাইফা তাহকুমূন।

তোমাদের কী হলো তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?

(৩৭)

أَمْ لَكُمْ كِتَابٌ فِيهِ تَدْرُسُونَ

আম লাকুম কিতাবুন ফীহি তাদরুসূন।

তোমাদের কাছে কী কোন কিতাব আছে যাতে তোমরা অধ্যয়ন কর

(৩৮)

إِنَّ لَكُمْ فِيهِ لَمَا تَخَيَّرُونَ

ইন্না লাকুম ফীহি লামা তাখাইইয়ারূন।

তাতে তোমরা যা পছন্দ কর, তাই পাও?

(৩৯)

أَمْ لَكُمْ أَيْمَانٌ عَلَيْنَا بَالِغَةٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِنَّ لَكُمْ لَمَا تَحْكُمُونَ

আম লাকুম আইমানুন আলাইনা বালিগাতুন ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাতি ইন্না লাকুম লামা তাহকুমূন।

অথবা তোমাদের জন্য কি আমার ওপর কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ কোন অঙ্গীকার রয়েছে যে, তোমাদের জন্য থাকবে তোমরা যা ফয়সালা করবে?

(৪০)

سَلْهُمْ أَيُّهُمْ بِذَلِكَ زَعِيمٌ

সালহুম আইয়ুহুম বিযালিকা ঝাঈম।

তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে এ ব্যাপারে যিম্মাদার?

(৪১)

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ فَلْيَأْتُوا بِشُرَكَائِهِمْ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ

আম লাহুম শুরাকাউ ফালইয়াতূ বিশুরাকাইহিম ইন কানূ সাদিকীন।

অথবা তাদের জন্য কি অনেক শরিক আছে? তাহলে তারা তাদের শরিকদের উপস্থিত করুক যদি তারা সত্যবাদী হয়।

(৪২)

يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلا يَسْتَطِيعُونَ

ইয়াওমা ইউকশাফূ আন সাকিওঁ ওয়া ইউদআওনা ইলাস সুজূদি ফালা ইয়াসতাতীঊন।

সে দিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। আর তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না।

(৪৩)

خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ

খাশিআতান আবসারুহুম তারহাকুহুম যিল্লাতুওঁ ওয়াকাদ কানূ ইউদআওনা ইলাস সুজূদি ওয়া হুম সালিমূন।

তাদের দৃষ্টিসমূহ অবনত অবস্থায় থাকবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ তাদেরকে তো নিরাপদ অবস্থায় সিজদা করার জন্য আহবান করা হত (তখন তো তারা সিজদা করেনি)।

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:

১. আখেরাতে আল্লাহর অনুগত ও অবাধ্য বান্দাদের পরিণতি হবে পুরোপুরি বিপরীত। আল্লাহর অনুগত বান্দারা আল্লাহর ক্ষমা, সন্তুষ্টি ও অচিন্তনীয় নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত লাভ করবে। আল্লাহর অবাধ্য বান্দারা জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিতে পতিত হবে।

২. কেয়ামতের দিন আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সামনে আসবেন তাদের কৃতকর্মের ফয়সালা করতে। সৃষ্টিকুল তার সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে।

৩. কেয়ামতের দিন কাফের ও মুনাফিকরাও বিশ্বাসী বান্দায় পরিণত হবে। তারা আল্লাহকে সিজদা করতে চাইবে, কিন্তু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবে। কারণ দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে সিজদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, নিজেদের অবিশ্বাস ও অহংকারের কারণে তারা সিজদা করেনি।

৪. কেয়ামতের দিন কাফেরদের চোখেমুখে থাকবে ভয়ের ছাপ। আজাব ও লাঞ্চনা ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জুটবে না।