২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:৫১:৫৯ পূর্বাহ্ন


নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি হোম কেয়ার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৫-২০২৪
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি হোম কেয়ার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি হোম কেয়ার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ


যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিনীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীকর্মীরা। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক-তৃতীয়াংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নিয়মিত। নিউ ইয়র্কের একটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন 'বাড়িতে যত্ন' (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে নারীকর্মীদের সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

নিউ ইয়র্কে অঙ্গরাজ্যের শ্রম আইনের সেকশন ২০১-জি অনুযায়ী প্রতিটি নিয়োগকর্তার জন্য একটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। কিন্তু এ আইন মানছে না কোন নিয়োগকর্তা। ফলে বাংলাদেশি মালিকানাধীন 'বাড়িতে যত্ন' (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির হচ্ছেন নারী কর্মীরা।    

নিউ ইয়র্কের জামাইকায় অবস্থিত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি মালিকানাধীন 'বাড়িতে যত্ন' সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ওরফে কাজীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধ ডজন নারী। শুধু তাই নয় অনেক পুরুষ কর্মীও তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রতিকার না হওয়ায় নারীকর্মীদের ওপর কাজীর যৌন হয়রানী ও পুরুষকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।      

কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ মাত্র ৮/৯ মাসে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি মালিকানাধীন 'বাড়িতে যত্ন' (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপকের চাকুরি পান। তিনি এখানে এসেছিলেন শুন্য হাতে। তার থাকা খাওয়াসহ কোন কর্মসংস্থান ছিল না। প্রতিষ্ঠানের মালিক তার অসহায়ত্বে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে তাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। কিন্তু স্বল্প সময়ে বিভিন্ন কৌশলে এবং মালিকের সরলতার সুযোগে অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন। নিউ ইয়র্কের করোনাতে 'মেজবান হাউস' নামে একটি রেস্তোরাঁয় রয়েছে যৌথ মালিকানা। একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক নারীকর্মীকে উক্ত রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়ে গোপনে ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাজী চাকুরিতে যোগদানের ৬ মাসের মাথায় কর্মচারিদের সাথে এমন ভাব দেখান যে তিনিই উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক। নারী ও পুরুষকর্মীদের নিয়মিত শাসাতেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে যে কোন নতুন নারী-কর্মীকে দেখলেই তিনি কুপ্রস্তাব দেন। তার এমন আচরনের ফলে অনেকেই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে এখন ঘরে বসে আছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারীকর্মী জানিয়েছেন। তিনি অনেক নারীকর্মীকে কুপ্রস্তাবসহ দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ক্ষুদে বার্তাও পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।  

তিনি আরও জানান, উক্ত প্রতিষ্ঠানের মম নামের একজন নারীকর্মী কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে দাপ্তরিক কাজের ভুল ধরিয়ে তাকে তার ফাঁদে ফেলেন। এক পর্যায়ে তাকে রাতের সঙ্গী করতে বাধ্য করেন। তারা দু'জনে বর্তমানে একত্রে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। কাজীর স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে লন্ডনে। তার চারিত্রিক অবনতির কথা স্ত্রী জানেন বলে নিয়মিত স্ত্রীর সাথে তার ঝগড়া হয়ে থাকে। স্ত্রীর সাথে তার এ ঝগড়ার কথা উক্ত 'বাড়িতে যত্ন' (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারিদের জানা রয়েছে, কারণ তিনি স্ত্রীর সাথে নিয়মিত ঝগড়া করতেন অফিসে বসেই। তার লাম্পট্যের কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশি মালিকানাধীন উক্ত 'বাড়িতে যত্ন' (হোম কেয়ার) সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে ঘটনার কিছুটা সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

উক্ত প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ওরফে কাজীকে তার ফেসবুকের বার্তাবাহকের ক্ষুদে বার্তায় যোগাযোগসহ প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। একটি পাঠিয়ে করে তা বাতিল (ডিলিট)করেন।