পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম অজু। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। নামাজ ছাড়াও সবসময় অজু ও পবিত্র অবস্থায় থাকলে মন সতেজ থাকে। এর বিশেষ ফজিলতও রয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো ও দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো’। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত, ৬)
শুধু নামাজ বা কোরআন তিলাওয়াত ছাড়াও সব সময় অজু অবস্থায় থাকার ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তওবাকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ২২২)
সবসময় অজু অবস্থায় থাকা হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বিশেষ আমল ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে ভ্রমণের সময় বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, তোমার সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আমাকে বলো, আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমার সর্বোত্তম আমল হলো, আমি রাতে ও দিনে অজু অবস্থায় থাকি। আর যখনই অজু করি তখনই সাধ্যমতো নামাজ আদায় করি।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস, ৩৫৪৫৪)
ফরজ ইবাদত ছাড়া অন্য ইবাদতের জন্য অজু করা মুস্তাহাব। এখানে অজু করা মুস্তাহাব এমন কিছু ইবাদতের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ তায়ালার জিকির করার সময়: আল্লাহ তায়ালার জিকির করার সময় জিকির কথা মুস্তাহাব। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে সাধারণ জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, কাবা শরীফ তওয়াফ ইত্যাদি। এসব কারণে অজু করা মুস্তাহাব।
عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ " إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ
আল-মুহাজির বিন কুনফুয রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, একদিন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমন অবস্থায় পৌঁছলেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাবরত ছিলেন। তিনি তাকে সালাম দেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজু না করা পর্যন্ত তার সালামের জবাব থেকে বিরত থাকেন। এরপর তিনি তাকে বললেন, আমি পবিত্র হওয়া বা পবিত্রতা অর্জন করা ছাড়া আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করা অপছন্দ করি। (আবূ দাউদ, হাদিস, ১৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩৫০)।
তবে অজু করেই সালামের উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। অন্য এক হাদিসে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন। (সহিহ মুসলিম, ৪/৬৮)
ঘুমানোর সময়: ঘুমানোর আগে অজু করা মুস্তাহাব। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: " إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ، فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ، ثُمَّ قُلْ: اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ...
বারা বিন আজেব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের অজুর মতো করে নেবে। তারপর ডান পার্শে শুয়ে বলবে হে আল্লাহ! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম, ....। (বুখারি, হাদিস, ২৪৭, মুসলিম, হাদিস, ২৭১০)
অপবিত্র ব্যক্তি যখন খাওয়া, পান করা, ঘুমানো কিংবা পুনরায় সহবাস করার ইচ্ছা করবে: আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জুনুবী (অপবিত্র) অবস্থায় খাওয়া বা ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন সালাতের অজুর মতো অজু করতেন। (বুখারি. হাদিস, ২৮৮, মুসলিম, হাদিস, ৩০৫)
অপর এক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চায় তাহলে সে যেন সালাতের অজুর মতো অজু করে। (মুসলিম, ৩/২১৭), আবু দাউদ, হাদিস, ২১৭)
গোসল করার আগে: আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসলের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢালতেন এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নিতেন। এরপর সালাতের অজুর মতো অজু করতেন। (বুখারি, হাদিস, ২৪৮, মুসলিম, হাদিস, ৩১৬)
প্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন করে অজু করা: হজরত বুবদাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের জন্য অজু করতেন। তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি অজু করছেন ও দু’মোজার ওপর মাসাহ করেছেন এবং এক অজু দ্বারাই কয়েক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছেন। (মুসলিম, হাদিস, ২৭৭, আবু দাউদ, হাদিস, ১৭১)