৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৫:৪৬:২৬ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে খেজুর গুড়ে চাঙ্গা গ্রামীন অর্থনীতি!
মঈন উদ্দীন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
রাজশাহীতে খেজুর গুড়ে চাঙ্গা গ্রামীন অর্থনীতি! রাজশাহীতে খেজুর গুড়ে চাঙ্গা গ্রামীন অর্থনীতি!


* গাছের সংখ্যা ১১ লাখ ১৫ হাজারটি

* গুর হবে সাড়ে নয় হাজার মেট্রিক টন

* বিক্রি হবে দেড়শ’ কোটি টাকার

রাজশাহীতে শুরু হয়েছে খেজুরের গুড় কেনাবেচা। সেই সঙ্গে বাড়ছে রস থেকে গুড় উৎপাদন। প্রতি বছর বাড়ছে খেজুরের গাছের সংখ্যাও। এমন অবস্থায় খেজুরের গুড় কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে জেলা-উপজেলাগুলোর গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গাছ রয়েছে বাঘা, পুঠিয়ায়, চারঘাট এবং দুর্গাপুর এলাকায়। এই চার উপজেলায় গাছের সংখ্যা ও গুড় উপাদন বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর গাছের বাগান রয়েছে। সড়কে, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনায় খেজুর গাছ রয়েছে। শীতে এসব গাছ হয়ে ওঠে গাছিদের কর্মসংস্থানের উৎস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় একটি গাছে বছরে ২০ কেজি খেজুরের রস হয়। তা থেকে ৮ কেজি খেজুরের গুড় হয়। এছাড়া চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় মোট খেজুরের গাছ রয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১৫ হাজারটি। আবাদ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫’শ হেক্টর জমিতে। এছাড়া মোট গুড়ের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৯৫ লাখ  কেজি বা সাড়ে ৯হাজার মেট্রিক টন। আর বিক্রি হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার।  ২০২২-২৩ মৌসুমের হিসেবে রাজশাহী জেলায় মোট খেজুরের গাছ ছিল ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি। আবাদ হয়েছিল ৫৪১ দশমিক ৩৭ হেক্টর জমিতে। এছাড়া মোট গুড়ের উৎপাদন হয়েছিল ৮৮ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৬ কেজি বা ৮ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন। 

রাজশাহীর শুধু বাঘা উপজেলায় চলতি মৌসুমে খেজুর গুড় থেকে ৩০ কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উদ্যোক্তা পেলে আমের মতো গুড় রপ্তানীতেও সরকার সহায়তার চিন্তা-ভাবনা করছে। এর জন্য ব্যসায়ী ও উদ্যোক্তা খোঁজা হচ্ছে।

এই উপজেলায় দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ৩০ হাজার ৩৮৯ জন কৃষি পরিবার রয়েছে। খেজুর বাগান রয়েছে ৪ হাজার। এছাড়া সড়কপথ, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনা মিলে দেড় লক্ষাধিক খেজুরগাছ আছে। একজন গাছি প্রতিদিন ৫০-৫৫টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার গাছি রস সংগ্রহ করেন। প্রতি মৌসুমে তারা খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বাঘা বাজারের গুড় ব্যাবসায়ী এনামুল হক বলেন, চলতি শীত মৌসুমে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকার গুড় বেচা কেনা হবে। ফলে উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টাকা আয় করবেন।

গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে গাছে কোর (মাটির তৈরি হাড়ি) লাগিয়ে আসেন। আর সকালে রস ভর্তি কোর নামান। খেজুরের রস ও গুড় তৈরিকে কেন্দ্রে করে বছরের আড়াই থেকে তিন মাস ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। প্রতি মৌসুমে খেজুর গাছের ওপর নির্ভর করে অনেকের জীবিকা। কাটাখালীর হারিয়ান গ্রামের গাছি শমসের আলী। তিনি ২৬ থেকে ৩০ বছর ধরে খেজুরের গাছ লাগান। রস সংগ্রহ ছাড়াও তিনি গুড় তৈরি করেন। তার বেশির ভাগ খেজুরের গাছ এলাকাতেই।

শমসের আলী বলেন, প্রায় ১২০টি গাছের রস সংগ্রহ করেন। সে রসগুলো বাড়িতে জ্বাল করে প্রায় ২২ থেকে ২৫ কেজি গুড় তৈরি হয়। গুড় তৈরির জন্য জ্বালানি ও সামান্য কিছু কেমিকেলের খরচ বাদ দিলেও ভালো লাভ হয়। শুধু শীত মৌসুমে কাজ করলেও তার পুরো বছরের আয়-রোজগার হয়ে যায়। 

এছাড়াও এই মওসুমে গুড় তৈরিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ভূমিকা থাকে উল্লেখযোগ্য। বেশির ভাগ বাড়িতে পুরুষ গাছ থেকে রস এনে দেওয়ার পরে অন্য কাজে চলে যান। এরপর রস জ্বাল করে তাক মতো নামান নারীরাই। তেমনি এক নারী রওমনআরা (৩৩)। তিনি বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালান। ভোররাতে খেজুরের গাছ থেকে রস নামিয়ে বাড়িতে আনেন। এরপরে গোসল ও খাওয়া-দাওয়া করে কাজে বেড়িয়ে যান। তারপর রস ছাকনা দিয়ে ছাকা হয়। এরপর চুলার ওপরে কড়াইয়ে দেই। গুড় না হওয়া পর্যন্ত জ্বাল করি। গুড় হয়ে গেলে সেগুলো ছোট ছোট পাত্রে ঢেলে রাখি। শক্ত হলে সেগুলো আবার কাগজে মুড়িয়ে রেখে দেই বিক্রির জন্য।

পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাটে গুড় বিক্রেতা জয় বলেন, সপ্তাহের দুদিন এখানে হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। এই গুড় দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে পাইকাররা নিয়ে বিক্রি করেন। আমাদের রাজশাহীতে বিদেশে পাঠানোর মতো অর্ডার আসে না। তবে ঢাকার আড়ত থেকে গুড় কিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা প্রবাসী বাঙালিদের কাছে খেজুর গুড় পাঠান। 

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরকারি হিসেবে চলতি মৌসুমে মানুষ খেজুর গুড় থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আয় করবেন। উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গুড় উৎপাদনে সহায়তা দেওয়া হলে এই গুড়কে আরও লাভজনক করা সম্ভব। আমের মতো খেজুর গুড় বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানি করা হলে এই গুড় থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, গুড় রপ্তানীর জন্য এখনো আমরা কাউকে পাইনি। কোনো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা পেলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। গুড় রপ্তানীযোগ্য করতে যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে, সেসব পক্রিয়াগত সহযোগিতাও আমরাও করবো। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আগে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে আগে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণঅধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, দেশজুড়ে যেমন রাজশাহীর আমের খ্যাতি আছে তেমনি এখানকার সুমিষ্ট খেজুর গুড় প্রসিদ্ধ। জেলার গাছিরা শীত মৌসুমে গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে গুড় তৈরি করেন। উৎপাদনকৃত গুড়গুলো উপজেলার হাটগুলোতে কেনাবেচা হয়। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে বিক্রি করেন। সেই গুড় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি করা হয়। এতে জেলার পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে এখন চাঙাভাব বিরাজ করছে।

ভোটও সুষ্ঠু হবে, ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে আসবেন: সিইসি

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিন্দ্বিতামূলক হবে। ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে আসবেন ভোট দিতে। আশা করা যায় ভোটও সুষ্ঠু হবে।’ বুধবার বেলা ১২টার দিকে রাজশাহী সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনের সকল প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর আগে তিনি প্রার্থীদের সাথে মতবিনিয়ম সভায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এবং প্রার্থীরা সকলে মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি বিশ্বাস করেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে নিতে হবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, মতবিনিময়ে প্রার্থীরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। কিভাবে সেগুলো নিরসন করা যায় সেই গাইডলাইন প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রার্থীদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে আচরণবিধি মেনে চলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা আশ্বাস রাখুন সকলের প্রয়াসে নির্বাচন সফল হবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চায়। এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

এ সময় তার সাথে ছিলেন আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কশিমনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এদিকে দুপুর ১টার দিকে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে আলোচনা সভায় যোগ

রাজশাহীর মোহনপুরে বিপুল পরিমান ফেনসিডিল-সহ মাদক কারবারী গ্রেফতার

অভিলাষ দাস তমাল, রাজশাহী: রাজশাহীর মোহনপুরে বিপুল পরিমান ফেনসিডিল-সহ মোঃ ফারুক (৩৫), নামের এক মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১টায় রাজশাহীর মোহনপুর থানাধীন (৪নং মৌগাছি ইউনিয়নের) বাটুপাড়া মধ্যপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার শয়ন কক্ষের খাঁটের নীচে ১টি ট্রাভেল ব্যাগের ভিতর লুকানো অবস্থায় ১৪০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার মাদক কারবারী মোঃ ফারুক (৩৫), সে ওই এলাকার মোঃ আইয়ুব আলীর ছেলে।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-৫, রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতার মাদক কারবারী ফারুক স্বীকার করে জানায়, উদ্ধারকৃত ফেনসিডিল ভারতীয় সীমান্তবর্তী স্থান থেকে সংগ্রহ করে তার বসতবাড়ীতে বিক্রির উদ্দেশ্যে রেখেছিল। সে ট্রাভেল ব্যাগের মাধ্যমে রাজশাহী-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রী হিসেবে ট্রেন, বাস, ট্রাক-সহ বিভিন্ন পরিবহণের যোগে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে থাকে। তার নামে পূর্বেও একটি মামলা রয়েছে। 

এ ব্যপারে গ্রেফতার মাদক কারবারী বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব।