২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০২:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন


ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকায় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ক্ষোভ
নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২২
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকায় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ক্ষোভ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকায় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ক্ষোভ


ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান গ্রেগরি মিকস। তিনি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসেঙ্গে বাংলাদেশের নীরব ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই ইস্যুতে জাতিসংঘে ভোটদানের মধ্য দিয়ে পরিস্কার হয়ে গেছে কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে কুইন্সের জামাইকার একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ‘মিট এন্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মিকস বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোট এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমাদের নজর থাকবে। গত ৩১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানের পর এবার বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠক করলেন গ্রেগরি মিকস। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজের অনুষ্ঠানে মার্কিন কংগ্রেসম্যান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-র‌্যাব এর বর্তমান ও সাবেক সাত উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতার যোগসাজসে যুক্তরাষ্ট্রস্থ ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবসের কয়েকজন কর্মকর্তা তা বিকৃত করে প্রকাশ করলে আলোচনার ঝড় ওঠে।

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকসের বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) রাতে প্রবাসী সাংবাদিক ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস’র সম্পাদক ছাবেদ সাথী কংগ্রেসম্যানের ফেসবুকে ক্ষুদে বার্তায় একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। উক্ত চিঠি পেয়ে পরদিন মার্কিন হাউজ অব ফরেন কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি তার বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা দেন।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ন্যায্য হবে না। সম্প্রতি র‌্যাব ও র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে ডব্লিউ মিকস বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি নিষেধাজ্ঞা নির্দিষ্টভাবে দেওয়া হলে সেটি বেশি কার্যকর। বাংলাদেশের ওপর সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ন্যায্য হবে না।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করতে চান মার্কিন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করবো। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করাসহ দেশটির মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করবো।

এর আগে গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন সেটি বিকৃত করে ভূল তথ্য মিশিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। মধ্যাহ্নভোজের উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ মিশনের কোন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মি ও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের যোগসাজসে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য সমৃদ্ধকর উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, এম এ সালাম, আওয়ামীলীগ নেতা ড. প্রদীপ কর, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ফরাসত আলী, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামীলীগের নেতা মমতাজ শাহনাজ ও রুমানা আকতার, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবারের এই ‘মিট এন্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে গ্রেগরি মিকস ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে আনা রেজুলশনে বাংলাদেশের ভোটদানে বিরত থাকা প্রসঙ্গে বলেন, জাতিসংঘের এ ভোটদানের মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেছে কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়। আমরা অবশ্যই বিষয়টি নজরে নিয়েছি।

একই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোট এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমাদের নজর থাকবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি বাংলাদেশসহ আরও কিছু দেশের সমর্থন প্রসঙ্গে কংগ্রেসম্যান মিক্স বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে আমি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করেছি। সতর্কভাবে এটা দেখেছি যে জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশ কিভাবে তাদের ভোট দিয়েছে। ১৪৪টি দেশ রাশিয়ার বর্বর আগ্রাসনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। চারটি দেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে। এ ভোটের মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেছে কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়। আমরা বিষয়টি নজরে নিয়েছি।’

মিক্স তার বক্তব্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলে থাকি যুক্তরাষ্ট্র হল গণতন্ত্রের দেশ। আপনারা যারা বাংলাদেশিরা আছেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সহায়তা করছে।’

শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করে কংগ্রেসম্যান মিক্স বলেন,‘সবাই যেটা প্রত্যাশা করে সেটা হচ্ছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এটাই পরিবর্তনের সূচনা বয়ে নিয়ে আসে, নিয়ে আসে মানবাধিকারের মুক্তি। আপনারা যদি পৃথিবীর দিকে তাকান তাহলে দেখবেন মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চলমান। এ অভিযোগগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।’

ইউক্রেন প্রসঙ্গে মিকস বলেন, ‘ইউক্রেনে এখন যা ঘটছে তা আমার বিচারে মানবাধিকারের লংঘন। নিরীহ মহিলা, শিশুসহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রসঙ্গে মিক্স বলেন,‘বাংলাদেশে আমরা দেখছি একটি পক্ষ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। একই চিত্র আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে। যেসব ব্যক্তিরা এসব মানবাধিকার লংঘনের পেছেন রয়েছেন তাদের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই আমরা চাই অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় অংশীদার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে, নিম্ন আয় থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।’

বাংলাদেশে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিক্স বলেন,‘বাইডেন প্রশাসন যখন দেখতে পেল, বাংলাদেশে কিছু অংশ ভুল কাজে জড়িয়ে পড়েছে, তখনই মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বিশেষ বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গণতন্ত্রে বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে অধঃপতনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছে।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে গ্রেগরি মিক্স বলেন,‘আমরা জানি সামনে একটি জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এ নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। আমি রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও এ চ্যালেঞ্জ দেখেছি। বাংলাদেশেও গণতন্ত্রে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ভোট গ্রহণ হবে অবাধ এবং নিরপেক্ষ। এটি আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যেমন চাই তেমনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব জায়গায় তা দেখতে চাই।’  

যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান ভুইয়া মিল্টনের সভাপতিত্বে এবং শাহ নেওয়াজের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী, বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, জসীম উদ্দীন ভুইয়া, মোহাম্মদ রশিদ, নাহিদুল খান সাহেল, আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, মাকসুদুল হক চৌধুরী, এবাদ চৌধুরী, আতিকুল হক আহাদ, সাইফুর খান হারুন, ফয়েজ চৌধুরী, বদিউল আলম প্রমুখ।

রাজশাহীর সময়/এএইচ