২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৫১:০২ অপরাহ্ন


কিডনির সমস্যা দূর করতে নিয়মিত এলাচ খান
ফারহানা জেরিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৩-২০২২
কিডনির সমস্যা দূর করতে নিয়মিত এলাচ খান ফাইল ফটো


এলাচে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য পরিপোষক ভিটামিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মজুত রয়েছে। নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, থিয়ামিন, ভিটামিন এ, সি ছাড়াও সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, লোহা, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি আছে এলাচে।

মশলা হিসেবে এলাচ বহুদিন ধরেই পরিচিত। এছাড়াও এর বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। হজমের সমস্যা মেটাতে যেমন সাহায্য করে তেমনই কিন্তু সঠিক ভাবে খেতে পারলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও দূর হয়।

নিয়মিতভাবে এলাচ খেতে পারলে একাধিক রোগ, জ্বালা দূরে থাকে। এছাড়াও এলাচের একটি নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ রয়েছে। যে কোনও মিষ্টি থেকে মাছ, মাংস- এলাচ কয়েকদানা না পড়লে যেন রান্নায় স্বাদবদলই হয় না। এই এলাচের কিন্তু একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। আমাদের শরীরে খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে যেমন সাহায্য করে তেমনই শরীরে হরমোনের ক্রিয়া কলাপ বজায় রাখতেও সাহায্য করে এই মশলা।

প্রাকৃতিকভাবে বায়ুনাশকারী হিসেবে কার্যকরী এলাচ যা পেটের ফাঁপা অবস্থা হ্রাস করে। দেহের ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ দূর করার পাশাপাশি এলাচ পরিপাকে সাহায্য করে এবং পিত্তরসের প্রবাহ বৃদ্ধি করে।

এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কার্যকরী এলাচ মুখে দুর্গন্ধ হলে চুষে খেতে পারেন। শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যা যেমন হুপিংকাশি, ফুসফুস সংক্রমণ, অ্যাজমার মতো নানা সমস্যায় এলাচ খুব কার্যকরী।

এলাচ কিডনিতে জমে থাকা ক্যালসিয়াম ও ইউরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এলাচ খেলে বিভিন্ন ধরনের কিডনির সমস্যা, মূত্র থলির সমস্যা, কিডনি পাথর, নেফ্রেটিস, মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা ও ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের সমস্যা নিরাময় হয়।

আমাদের রক্তের, কোষের ও শরীরের ফ্লুইডে উপস্থিত একটি অন্যতম জরুরি উপাদান হল পটাশিয়াম। এলাচে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের হার্টবিটকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তচাপকেও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া রক্তবাহে রক্ত চলাচলও ঠিক রাখে এই এলাচ।

এলাচে থাকা ডিউরেটিক উপাদান উচ্চরক্তচাপের সমস্যা কমায়। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যা দূর হয়।

এলাচের উপকারিতা নিয়ে চিকিত্‍সকরা বলেন, আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এলাচের। তেমনই ঘ্রেলিন ও লেপটিনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও এই মশলা খুবই ভাল।

আর্য়ুবেদ শাস্ত্র অনুসারে পরিপাকে, শরীরের ফোলাভাব কমাতে এবং অন্ত্রে গ্যাস উত্‍পাদন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু ভূমিকা রয়েছে এলাচের। এছাড়াও কফ, কাশির সমস্যাতে কাজে আসে এই এলাচ।

এলাচের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যে কারণে, ফুসফুসে সংক্রমণ জনিত সমস্যায় কিংবা হাঁপানির মত সমস্যা থাকলে এলাচ খাওয়ার কথা বলা হয়।

এছাড়াও মুখে দুর্গন্ধ হলে, বমি বমি ভাব থাকলে, অতিরিক্ত খিদে-তৃষ্ণা থাকলে, পেট ফাপা, হেঁচটি, গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যাতেও কিন্তু দারুণ কাজ করে এই এলাচ। তবে এলাচ খাওয়ারও কিন্তু বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। একসঙ্গে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না।

এলাচের ছোট টুকরো চায়ে দিন। কিংবা ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ এলাচ গুঁড়ো ঘি বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। চায়ে এলাচ, দারচিনি একসঙ্গে দিয়ে ফুটিয়ে খান।

নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের মত সমস্যা কিংবা ডায়ারিয়া হলে আগে এলাচ ভাল করে চিবিয়ে নিন। এবার সেই রস ধীরে ধীরে গিলে ফেলুন।

যে কোনও খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে এলাচ চা খান। এতে খিদে-মন্দার সমস্যা দূর হয়। হজম ভাল হয়। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের মত সমস্যাও কিন্তু আসে না। এক গ্লাস ইষদুষ্ণ জলে তিন থেকে চারটে এলাচ ফেলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার সারাদিনে সেই জল ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এতেও কিন্তু একাধিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যে কোনও মিষ্টি বানাতে এলাচ ব্যবহার করুন। এতে বাড়বে খাবারের স্বাদ।

এলাচ কিন্তু টনিক ও উত্তেজক স্টিমুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে। তাই নিয়ম করে এলাচ খাওয়া শরীরকে শক্তিশালী তো করেই, তাছাড়া বন্ধ্যাত্ব, যৌন জীবনে অনীহা ইত্যাদির ওষুধ হিসেবেও এলাচ কাজ করে।

এলাচের এই বিপুল উপকারিতার জন্য আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ওষুধের অন্যতম উপাদান হিসেবে এলাচ ব্যবহার করা হয়। সুস্থ থাকতে নিয়ম করে এলাচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।

রাজশাহীর সময়/এমজেড