অনেকেরই শৈশবের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল ‘দ্য আর্চিস’ কমিক সিরিজ। বলিউডের পরিচালক জোয়া আখতার এর মধ্যেই যোগ করেছেন কিছুটা দেশি ট্যুইস্ট। আর তাঁর নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ান অরিজিনাল ফিল্ম ‘দ্য আর্চিস’-এর হাত ধরে একঝাঁক নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রী আত্মপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অগস্ত্য নন্দা, খুশি কাপুর, সুহানা খান, বেদাঙ্গ রায়না, মিহির আহুজা, অদিতি সায়গল এবং যুবরাজ মেন্ডা।
মুক্তি পাওয়া ট্রেলারে আগেই দেখা গিয়েছিল, একটি হিল স্টেশনে কিছু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারের সদস্যদের ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ছবির গল্প। আর এই গল্পের প্রধান চরিত্র হল আর্চি অ্যান্ড্রুজ (অগস্ত্য নন্দা), বেটি কুপার (খুশি কাপুর), ভেরোনিকা লজ (সুহানা খান), রেজি ম্যান্টল (বেদাঙ্গ রায়না), জাগহেড জোন্স (মিহির আহুজা), এথেল মাগস (অদিতি সায়গল) এবং ডিলটন ডয়লি (যুবরাজ মেন্ডা)। আর তাঁরা বেড়ে উঠেছেন রিভারডেলে। ফলে এই শহর, বিশেষ করে এর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি পার্কের সঙ্গে গড়ে উঠেছে তাঁদের গভীর ভালবাসা। আসলে এই পার্কটিতে গাছ লাগিয়েছে রিভারডেলের প্রতিটি পরিবারই।
সকলেই যখন সুখ-শান্তিতে সেখানে বাস করছেন, তখনই ঘনিয়ে আসে বিপত্তির কালো মেঘ। কারণ ভেরোনিকার বাবা হিরাম লজ (আলি খান) পার্কটি বন্ধ করে সেখানে একটি হোটেল বানাতে চান। যার ফলে বেটির বাবা নিজের বইয়ের দোকান খোওয়ান। এর পাশাপাশি আরও পরিবর্তন আসে এবং তাঁদের দলটিতেও ভাঙন ধরে যায়। ইতিমধ্যেই আবার বেটি জানতে পারেন আর্চির প্রতি ভেরোনিকার ভালবাসার কথা। ফলে তিনি ক্রাশ এবং নিজের প্রিয় বন্ধুর মধ্যে কোনটা বাছবেন, সেটা নিয়ে টানাপোড়েনে ভুগতে থাকেন। তবে ছবির দ্বিতীয় ভাগে আর্চিস দলটি একসঙ্গে থাকার গুরুত্ব অনুভব করে। আর সব শেষে পার্কটিকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সফল হয় তাঁরা।
প্রায় ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিটের এই ছবিতে রয়েছে কিছু ভাল-মন্দ দিক। Gen Z-র জন্যই মূলত এই ছবি বানিয়েছেন পরিচালক। আর চিত্রনাট্যকার আয়েশা দেবিত্রী ধিলোঁ এবং রিমা কাগতির সঙ্গে মিলে ‘দ্য আর্চিস’ ছবির মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়কে একগুচ্ছ বার্তা দিতে সফল হয়েছেন জোয়া। এর পাশাপাশি এই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তাকেও। আর সবথেকে বড় কথা হল, প্রত্যেক অভিনেতাই দারুণ ভাবে নিজেদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
আর্চি হিসেবে অগস্ত্য নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ভেরোনিকা এবং বেটির ভূমিকায় সুহানা এবং খুশি দুজনেই সাবলীল। এমনকী পর্দায় যতবারই তাঁকে দেখা গিয়েছে, ততবারই যেন তাক লাগিয়েছেন শাহরুখ-কন্যা। অন্য দিকে, খুশির সারল্যে ভরা অভিনয় ইনস্টাগ্রামে তাঁর গ্ল্যামারাস অবতারকে ভুলতে বাধ্য করবে। ফলে পরবর্তী ছবিতে তাঁদের দেখার জন্য উদগ্রীব ভক্তরা। এমনকী প্রতিটি দৃশ্যে নিজেদের উপস্থিতি বলিষ্ঠ করে তুলেছেন বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও।
তবে রয়েছে কিছু খামতিও। যেমন – সবথেকে বড় গলদ রয়েছে ছবির গল্প বলার ধরনেই। আবার প্রতিটি বিষয়কে একত্রিত করার ক্ষেত্রেও খামতি নজরে এসেছে। আবার ছবির সঙ্গীতও অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে, যা ছবির গল্পকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আসলে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্যই ছিল একটা করে গান। তা-ও যদি ধরা হয়, এটা মিউজিক্যাল বলে গান থাকবেই, তবে ছবির দ্বিতীয় ভাগে কোনও গানই যেন ঠিক খাপ খাওয়াতে পারেনি। এছাড়া ছবির দৈর্ঘ্য আরও কমানো যেত। আবার ক্লাইম্যাক্সের ক্ষেত্রে যেন একটা তাড়াহুড়ো নজরে এসেছে।