২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৬:৪১:০৯ অপরাহ্ন


বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশ দ্বার হবে পতেঙ্গা টার্মিনাল :প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২৩
বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশ দ্বার হবে পতেঙ্গা টার্মিনাল :প্রধানমন্ত্রী


চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (সিপিএ) পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি আশার আলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটি বিশ্ব বাণিজ্যের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। আমাদের ব্যবসার জন্য বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

গতকাল বুধবার পিসিটি পরিচালনার জন্য সিপিএ ও সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) মধ্যে ‘কনসেশন চুক্তি’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনিসহ সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহের উপস্থিতিতে সিপিএ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও আরএসজিটির সিইও জিন্স ও ফোলি চুক্তিতে সই করেন। এর আগে সৌদি মন্ত্রী সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমরা এই “কনসেশন চুক্তি” স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করছি, তাই আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের অপেক্ষায় আছি যেখানে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, আরএসজিটি আগামী ২২ বছরের জন্য পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এটি বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করবে। স্বনির্ভর এই আধুনিক টার্মিনাল বন্দরের সক্ষমতা বাড়াবে, নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য সহজ করবে এবং কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে। টার্মিনালটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ ভারত, ভুটান এবং নেপালও এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবকে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। আমরা সব সময়ই সৌদি আরবকে আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পেয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, আরএসজিটি সৌদি সরকার কর্র্তৃক মনোনীত একটি স্বনামধন্য গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর।

প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের কারণে সৌদি সরকারকে তার আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘সৌদি কর্র্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বীকৃতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি জেদ্দা বন্দর এবং অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনার জন্য খ্যাতি অর্জনকারী আরএসজিটি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালও তার দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সঙ্গে পরিচালনা করবে।’

এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরও দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মান পূরণ হবে বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমাদের অর্থনীতি আমদানি-রপ্তানি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে উপকৃত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতার জন্য বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃঢ় সমর্থনের জন্য সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী ও তার প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনার প্রতিশ্রুতি গভীরভাবে প্রশংসিত।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ এবং আরএসজিটি চেয়ারম্যান আমের এ আলীরেজা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এ সময় বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ছাড়াও সৌদি ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্কে সন্তোষ : বাংলাদেশ ও সৌদি আরব দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহের মধ্যে গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে এই সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

সৌদি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত দেড় দশকে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন বিশেষ করে নারী উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধিরও প্রশংসা করেন।

পায়রাবন্দর এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত বছর আকওয়া পাওয়ার এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, আকওয়া পাওয়ার এর আগে ১০০০ মেগাওয়াট সৌর ফটোভোলটাইক শক্তি উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে।

এক হাজার মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে, আকওয়া পাওয়ার এবং পাওয়ার বিভাগ রামপালে ৩০০ মেগাওয়াট সোলার ইলেকট্রিক ইউনিটে একটি যৌথ অংশীদারত্বের প্রকল্পে কাজ করছে।

তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২০০ মেগাওয়াট প্রকল্পের জন্য পায়রা বন্দরে ৬০০ একর জমি বরাদ্দ করেছে, আকওয়া পাওয়ার এ বিষয়ে কাজ করছে।

তারা ফিলিস্তিন ইস্যু এবং গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনে সহায়তা পাঠিয়েছে।

সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ প্রধানমন্ত্রীকে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বাসস