সরকারি চাকরি বা প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে অবসর-পদত্যাগের পর তিন বছর সময় অতিবাহিত না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এমন বিধানের বৈধতা প্রশ্নে দেওয়া রুল খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১০ মাস আগে দেওয়া রুল খারিজের এ রায় দেয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে সামরিক-বেসামরিক চাকরিজীবীদের নির্বাচন করতে পদত্যাগ কিংবা অবসরের পর তিন বছর পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রুল খারিজের ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরপিওতে যে বিধান ছিল সেটি বহাল থাকবে। তিনি বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান হলেও সরকারি কর্মচারীরা আলাদা একটি শ্রেণির। আর নির্বাচন করা মৌলিক অধিকার নয়, এটি সংবিধিবদ্ধ অধিকার। সংবিধান অনুযায়ী, সরকার আইন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এখানে সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার আরপিওতে এই সংশোধনী এনে এই শর্ত যোগ করে। ফলে এই ধারাটি সংবিধান পরিপন্থী বা সাংঘর্ষিক নয়।’
তবে রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের সার্ভিস রুলসে এ ধরনের কোনো বিধান ছিল না। কিন্তু আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা অবসরের পর রাজনীতি করতে পারবেন কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যেখানে অন্য পেশার লোকরা যেকোনো সময় রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সেখানে শুধু অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা অবশ্যই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ‘১৯৭২-এর (আরপিও) ১২(১)(চ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসরে গেছেন এবং তার পদত্যাগ বা অবসরে যাওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকার যোগ্য হবেন না।’ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, ২০০৯ সালে আরপিও সংশোধন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্তযুক্ত বিধান করা হয়।
এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও লালমনিরহাটের আদিতমারীর বাসিন্দা মো. শামীম কামালসহ তিনজন চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে পৃথক চারটি রিট আবেদন করেন। আবেদনের যুক্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমানভাবে আইনের আশ্রয়লাভ করবেন। ফলে সরকারি কর্মচারীদের পদত্যাগ বা অবসরের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারার বিধানটি সংবিধাটি সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ ও ৬৬(১) অনুচ্ছেদের (নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা) সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ওই ধারার বৈধতা প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট। রুলে ১২(১) ধারার (চ) শর্ত সংবিধানের ১১, ১৯, ২৬, ২৭ ও ৬৬ (২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে কেন তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হওয়ায় কেন তা বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চায় হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ নভেম্বর রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গত ২৯ নভেম্বর রুলের ওপর শুনানি শেষে রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে তা অপেক্ষমাণ রাখে হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, তানিয়া আমীর ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।