২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৮:২৪:৩৩ অপরাহ্ন


ঋণ-আমানতের সুদহারে সীমা প্রত্যাহার
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১২-২০২৩
ঋণ-আমানতের সুদহারে সীমা প্রত্যাহার


ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করতে ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান (স্প্রেড) তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন স্প্রেড ৪ শতাংশ ছিল। এখন থেকে এর কোনো সীমা থাকবে না। ফলে ব্যাংকগুলো চাইলে আমানতে সুদ কম দিতে পারবে। বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক আমানতের ওপর যদি ৫ শতাংশ সুদ দিত তাহলে ওই ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নিতে পারত। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন ঋণ-আমানতের সুদহারের ক্ষেত্রে কোনো সীমা থাকবে না। ৩ শতাংশে আমানত নিয়েও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ আমানতের সুদহার যাই হোক ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’র (সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে। সুদহার নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারিত হওয়ায় সুদহারের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে তারল্য পরিস্থিতির বিবেচনায় ঋণের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমানতের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমানত ও ঋণের সুদহারের সীমা নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বাড়ল সুদের হার : অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহে ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমকি ৭৫ শতাংশ এবং ঋণ, লিজ, বিনিয়োগে সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। বুধবার বিকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে নভেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

এর আগে মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভায় চার ধরনের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিকসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সবাই একমত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এর মাধ্যমে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুন শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ২০২২ সালের অক্টোবরে একজন মানুষের যদি চাল, ডাল, চিনি, তেল, মাছ-মাংসসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; তাহলে এ বছরের অক্টোবরে একই খাবার কিনতে তার খরচ হয়েছে ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাবার কেনায় প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১২ টাকা ৫৬ পয়সা।