দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক সদস্য বা বিতর্কিত সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯(১খ) অনুসারে এ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (২৬ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্র-৪ এ তথ্য জানানো হয়।
পরিপত্রে ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৮ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটগ্রহণের তারিখের অন্যূন ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে গত ১৬ নভেম্বর জারিকৃত পরিপত্র-৩ এর মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসির নির্দেশনা অনুসারে ২ প্রস্থ ভোটকেন্দ্রের তালিকা বিশেষ বাহক মারফত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দিতে হবে। চূড়ান্ত তালিকায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন/পৌরসভা উল্লেখ করে সার-সংক্ষেপগুলোর সংখ্যাসহ মোট ভোটার সংখ্যা এবং পুরুষ ভোটার, নারী ভোটার ও হিজড়া ভোটার সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে।
সার-সংক্ষেপসহ চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকার হার্ড কপি সঙ্গে সফট্কপি সিডিতে ও ইন্টারনেটে দিতে হবে। এছাড়া, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৮ অনুচ্ছেদের (৫) দফার বিধান অনুসারে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর যদি পরিলক্ষিত হয়, সরকারি গেজেটে প্রকাশিত কোনো ভোটকেন্দ্র কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাহলে নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময়ে তা পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দিতে করার পর বা গেজেট প্রকাশের পর রিটার্নিং অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ কর্মকর্তার বিষয়ে ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯ এর দফা (১) ও (২) দফা অনুসারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের লক্ষ্যে তালিকা সংগ্রহের জন্য পরিপত্র-৩ এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্যানেলভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং অফিসাররা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত করবেন। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস/ প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীর মধ্য হতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী বা শিক্ষকদের মধ্য হতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ সম্ভব না হলেই কেবল বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান হতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাবে। তবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য যত সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শিক্ষকের প্রয়োজন হবে তার চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শিক্ষককে প্যানেলভুক্ত করতে হবে।
প্রার্থীর অধীন চাকরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিনিষেধের বিষয়ে ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯(১খ) অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চাকরিতে নিয়োজিত থাকেন অথবা অতীতে কোনো সময় নিয়োজিত ছিলেন, তবে তাকে প্রিসাইডিং অফিসার অথবা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অথবা পোলিং অফিসার নিয়োগ করা যাবে না। প্যানেলভুক্ত তালিকায় এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম থাকলে তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এমনকি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করার পরও কাউকে এ ধরনের পাওয়া গেলে তার নিয়োগ বাতিল করতে হবে। তাছাড়া, যে সকল কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক/শিক্ষিকা বিতর্কিত অথবা যাদের সম্পর্কে সংশয়-মতবিরোধ রয়েছে, সেই সকল কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যকে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবেও নিয়োগ করা যাবে না।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে বিশেষ দিকের বিষয়েও বিবেচনা করতে বলেছে ইসি। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগের সময় ওই সব কর্মকর্তার কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সততা, সাহস এবং নিরপেক্ষতার দিকে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা তাদের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার উপরই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদেরকে সকল প্রকার প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে।