চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কে তৈরি হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শহর থেকে বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে মূল শহরে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন ফৌজদারহাট হয়ে দ্রুত প্রবেশ করতে পারবে মূল শহরে। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৯ ভবনে তৈরি করা হয়েছে ৬৮৪টি ফ্ল্যাট। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ। আগামী মঙ্গলবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। ফলে চট্টগ্রামে এখন চলছে উন্নয়ন উৎসব। প্রকল্পগুলোর সুফল ভোগ করবে চট্টগ্রামবাসী।
১৪ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) তিনটি ও গণপূর্ত বিভাগ একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফৌজদার হাট রিং রোডের পতেঙ্গা মুখে আয়োজন করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিডিএ বাস্তবায়ন করছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকায় ‘নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’, ২০১৭ কোটি টাকায় ‘বাকলিয়া এক্সেস রোড’ ও ৩৫৩ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করেছে ‘বায়েজিদ লিংক রোড’ এবং গণপূর্ত বিভাগ ৪৮২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘সিজিএস কলোনি’।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএর তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এ জন্য পতেঙ্গার রিং রোডের মুখে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনটি প্রকল্পই চট্টগ্রামের যোগাযোগের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি সড়ক নির্মাণ করার মাধ্যমে চট্টগ্রামে যোগাযোগে একটা নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। এসব অবকাঠামোর মধ্য দিয়ে ব্যাপক সুফল মিলবে বঙ্গবন্ধু টানেলের। গণপূর্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম ৪ নম্বর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন বলেন, গণপূর্ত অধিদফতরের অধীন চট্টগ্রামে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ২০ তলা বিশিষ্ট ৯টি ভবনে ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এগুলোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি-বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠা-নামার জন্য ১৪টি র্যাম্প থাকবে। র্যাম্পগুলো পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে।
বায়েজিদ-ফৌজদার হাট লিংক রোড : সিডিএ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বায়েজিদ লিংক রোড নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে। দুই লেনের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে পরিবর্তন হয় নকশার। উন্নীত করা হয় চার লেনে। ব্যয় ধরা হয় ৩২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আগস্টে সংশোধিত প্রকল্পে ধরা হয় ৩৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৩ কোটি টাকা সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে খরচের নির্দেশ দেওয়া হয়। নতুন এ সড়ক দিয়ে ঢাকা ও উত্তর চট্টগ্রামগামী যানবাহনগুলো যানজটমুক্ত দ্রুতই চট্টগ্রাম নগর থেকে বের হতে পারছে।
জানা যায়, উদ্বোধন উপলক্ষে বায়েজিদ লিংক রোডের বিভিন্ন অংশের ফুটপাত সংস্কার ও সড়ক বাতি স্থাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পাহাড় ধসে ফুটপাতের ওপর থাকা মাটিগুলো সরানো হচ্ছে। সড়কের পাশে লাগনো হচ্ছে সড়ক বাতি। সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে সড়ককে।
বাকলিয়া এক্সেস রোড : সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত নির্মিত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ করে। সড়কটি ব্যবহার করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলার বাসিন্দারা দ্রুতই যুনজটমুক্ত চন্দনপুরা হয়ে মূল শহর, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং চকবাজারে থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারবে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে, কমবে ভোগান্তি। বাকলিয়া এক্সেস রোডটি ‘জানে আলম দোভাষ সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে ২২০ কোটি টাকা হয়।