০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৩০:১৭ অপরাহ্ন


প্রতিটি অপকর্মের তালিকা লিপিবদ্ধ হচ্ছে: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে রিজভী
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১১-২০২৩
প্রতিটি অপকর্মের তালিকা লিপিবদ্ধ হচ্ছে: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে রিজভী প্রতিটি অপকর্মের তালিকা লিপিবদ্ধ হচ্ছে: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে রিজভী


বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে নিখোঁজ করা, অত্যাচার-নির্যাতনসহ সকল অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, দলের তরুণ নেতাদের তুলে নিয়ে নিখোঁজ করে কি পান? আপনাদের নিজেদের তো সন্তান-বাবা-ভাই আছে। তারা যদি নিখোঁজ হয় তাহলে আপনাদের মনের অবস্থা কি হবে? কিভাবে আপনারা দলের নেতাকর্মীদের নিখোঁজ করেন, গুম করেন। সবগুলোর কিন্তু জবাব দিতে হবে। কেউ পার পাবেন না। সকল অপকর্মই রেজিস্ট্রার তালিকায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে। শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা সবাই এক দেশে বাস করি, একই ভাষায় কথা বলি, একই সংস্কৃতি লালন করি। যারা আমাদের নেতাকর্মীদের নিখোঁজ করছে, গুম করছে, অত্যাচার-নির্যাতন করছে তাদের প্রত্যেককে আমরা চিনি। যারা এসব অমানবিক, মনুষত্বহীন কাজ করছে তারা কেউ ছাড় পাবেন না। তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

আওয়ামী লীগ যানবাহনে আগুন দিয়ে বিএনপির নামে কোরাস গাইছে অভিযৈাগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে, তার অসংখ্য প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। কিন্তু ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) ও হাছান মাহমুদরা (তথ্যমন্ত্রী) কোরাস গাইছেন বিএনপির নামে আগুন সন্ত্রাসের দায় চাপাতে। কিন্তু যতই অপপ্রচার করুন মানুষ আর আপনাদের বিশ্বাস করে না। আপনাদের অপপ্রচার শুনে তারা আপনাদেরকেই প্রতারক মনে করে।

অতীতের মতো আরো একটি একতরফা ভূয়া নির্বাচনের নামে তামাশা করতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বেপরোয়া এবং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ৫৭ সেকেন্ডে নৌকা মার্কায় ৪৩ সিল মারার নির্বাচনের জন্য বেসামাল এখন শেখ হাসিনা। জনগণের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে তার বিভিন্ন বর্গী বাহিনী। তার প্রলয়ংকরী তা-বে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে গোটা বাংলাদেশ। যুদ্ধকালীন নিস্তব্ধ আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে জীবন-যাপন করছে সাধারণ মানুষ। ভিন্নমত প্রকাশ, বহুমাত্রিকতা, গণতন্ত্রের মৌল বিষয়গুলো চিরতরে অস্তাচলে যাত্রার অশনি সংকেত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সাংবিধানিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংপ্রামে জনগণের অভাবনীয় অংশগ্রহণ দেখে ক্ষমতা হারানোর আতংকে ভীত-সন্ত্রস্ত শেখ হাসিনা হিং¯্র-হস্তারক হয়ে উঠেছেন। তার নির্দেশে গোটা দেশকে রীতিমত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণ এখন একাত্তর সালের মতো মুক্তিযুদ্ধের ভয়ংকর পরিবেশে বসবাস করছে। পুলিশের অতি দলবাজরা এখন আওয়ামীলীগ লিমিটেড কোম্পানির কর্মচারীতে পরিণত হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলদাস কর্মকর্তা-সদস্যরা পাক হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। আর আওয়ামীলীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভূমিকা এখন রাজাকারের। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা হানাদারবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিতো। তাদের লুটপাট তা-বে সহযোগিতা করতো। আর বর্তমানে আওয়ামীলীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজাকারদের মতো র‌্যাপ-পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত আওয়ামী পুলিশ লীগকে গণতন্ত্রকামী মানুষের বাড়িঘর চিনিয়ে দিচ্ছে। তারা নিজেরাও মারধর করে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছে। কেবল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকই নন, একেবারে সাধারণ জনগণের ওপরও নজিরবিহীন জুলুম চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা নদীতে অবস্থান নিচ্ছে, গাছ তলায়, বাঁশ ঝারের ঝোপে-জঙ্গলে রাত্রিযাপন করছে। গ্রেফতারের ঝড় এমনভাবে চলছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আটক হয় ছাত্রদল নেতা, নির্ধারিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাতীয় দলের এহসানুল হুদাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জাকিরকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন তার লাশ পাওয়া যায়। ফরিদপুরের বিএনপি আইনজীবী নেতাকে গ্রেফতার করতে আসলে আতঙ্কে তার স্ত্রী মারা যায়। চারদিকে শুধু শোক আর কান্নার পানি। একাত্তরের মতোই দেশের প্রতিটি জনপদে গ্রাম-গঞ্জে মানুষ ঘরবাড়ী ছেড়ে বন-বাদাড়-মাঠে-প্রান্তরে-ফসলের ক্ষেতে পলাতক জীবন-যাপন করছে। রাত নামলেই জনপদে নামছে আতংক।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন বেশুমার গনতন্ত্রপন্থীদের নামে মামলা হচ্ছে। মামলা বাণিজ্যে থানাগুলো এখন রমরমা। ঘরে ঘরে এখন আতংক । মানুষের সুখ শান্তি সব ধ্বংস করে জল্লাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম যারা হানাদার দেখেনি তারা এখন রাজাকার এবং হানাদারদের দেখছে, সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি দেখছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সিপাহসালার তারেক রহমান দেশ এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নব্য আওয়ামী রাজাকারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের পক্ষের, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী অবৈধ সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আগামীকাল রবিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক রাজপথ- রেলপথ-নৌ-পথে অবরোধ কর্মসুচী সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের এই গনতান্ত্রিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে বিরোধী দলের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হাতুড়ি-চাপাটি-লগি-বৈঠাধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে-তান্ডব চালাচ্ছে।

রিজভী বলেন, মানবিক মর্যাদা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাইলে, পরিবারকে বাঁচাতে চাইলে, দেশ বাঁচাতে চাইলে, বিরোধী দলের ডাকা প্রতিটি কর্মসূচি, আমাদেরকে যে কোনো মূল্যে সফল করতে হবে। আপনার আজকের একটু কষ্ট, একটু ত্যাগই হয়তো গড়ে দিতে পারে আগামীর জন্য নিরাপদ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা ভুলে যাইনি, একজন শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ, ৯০ এর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সফলতার পথ রচনা করে দিয়েছিলো। আপনার ত্যাগ-কষ্টও বৃথা যাবেনা। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয় সুনিশ্চিত -ফ্যাসিবাদ পরাজিত হবেই হবে ...ইনশাআল।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন ১২টি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ৩১৫ জনকে এবং আসামী করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ জনকে। আর গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ হাজার ৪০৫ জনকে, আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৯০৬ জন এবং নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিকসহ ১২ জন। তথ্য সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব।