২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:২৪:৩৯ অপরাহ্ন


কথা দিয়েও কথা রাখেন না বাপ্পা হাজী, করেন প্রতারণা!
স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৩-২০২২
কথা দিয়েও কথা রাখেন না বাপ্পা হাজী, করেন প্রতারণা! কথা দিয়েও কথা রাখেন না বাপ্পা হাজী, করেন প্রতারণা!


স্টাফ রিপোর্টার: নগরীতে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বাপ্পা হাজী ওরফে শাহ সাবাব আলী বাপ্পা। বিশাল সম্পদশালী হওয়ার পরেও তিনি তার সাথে ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকা নানা লোকের কাছে করেছেন প্রতারণা। জমি, কাজ কিংবা কোনো চুক্তি যেটাতেই কারো সাথে আবদ্ধ হন, সেটাতেই তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেননা।

এনিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে বাপ্পা হাজীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দায়ের হয়েছে চন্দ্রিমা থানায়। অভিযোগটি করেছেন নগরীর পাওয়ার হাউজ এলাকার বাসিন্দা মো. আমির হোসেন ফাইটার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমরান আলী।

অভিযোগের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নগরীর পাওয়ার হাউজ এলাকায় এক বিঘা জমির রয়েছে বাপ্পা হাজীর। ওই জমিটির বহুতল ভবন নির্মানের জন্য তিনি মাটি খননের কাজ প্রদান করেন ওই এলাকারই ব্যক্তি আমির হোসেন ফাইটারের কাছে। তাদের মধ্যে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে মৌখিকভাবে চুক্তি হয় ৩ টাকা স্কয়ার ফিট হিসেবে মাটি খননের। এছাড়াও ওই স্থানের খননকৃত সম্পূর্ণ মাটি তাকে বিক্রিরও অনুমতি দেন বাপ্পা হাজী।

প্রাপ্ত অনুমতি সাপেক্ষে কাজও শুরু করেন আমির হোসেন। তবে কাজের মাঝে বাঁধ সাঁধের বাপ্পা হাজী। উত্তোলনকৃত মাটি নিয়ে তা নিজের বোন ও অন্যান্যাদের মাঝে বিক্রি করে দেন। এবং সেই মাটির অর্থ ও গাড়ীভাড়া প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত মোট মাটি নেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার। একই সাথে ওই জমিতে ৩ টাকা স্কয়ার ফিট হিসেবে মোট ৭৬ হাজার ৮০০ ফিট মাটি কর্তন করান আমির হোসেনের দ্বারা। যার বিল হিসেবে আমির হোসেন পান ২ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ টাকা। এর কোন অর্থই আমির হোসেনকে প্রদান করেননি বাপ্পা হাজী। টাকা চাইতে গেলে উল্টো চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখান তিনি।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী আমির হোসেন বলেন, হাজী সাহেব আমাদের স্থানীয় মানুষের সামনে আমাকে ৩ টাকা রেটে বেজ খননের কাজ দেন। তার কথামতো কাজ শুরু করি। কাজ চলার আগেই কিছু অর্থ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দেননি। উল্টো আমার ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এমনকি ঋণ করে কাজ শেষ করি। তারপরও তিনি আমাকে অর্থ দিচ্ছেন না। উল্টো আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, তিনি আমার উত্তোলিত মাটি নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। ওই অর্থ চাইলে দিবো দিবো করে এখন পর্যন্ত এক টাকাও দেন নি। এতে অনেকটায় বিপদের মধ্যে পড়েছি বলে জানান আমির হোসেন।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুধু আমি একাই ভুক্তভোগী নয়। তার কাছেই কাজ করতেন বন্টি নামের এক ব্যক্তি। তিনি তাকে পুরনো কাঠ ও কিছু ভাঙ্গা ইট দিয়ে দেন বিক্রির জন্য। পরে তিনিই আবার থানায় অভিযোগ দেন মন্টির নামে। এখানেই শেষ নেই তার। তার ওই এক বিঘা জমিটিতে ফাইভ বিল্ডার্স নামের একটি নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তাদের সাথে তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন এবং তাদের মামলা ও হুমকি-ধামকি দিয়ে বিতাড়িত করেন।

ভুক্তভোগী সাজাহান নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান,  নগরীর সিলিন্দা এলাকায় একটি আমের বাগান দুই ব্যক্তির কাছে ইজারা প্রদান করেন। পরে তাদের মধ্যেও গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়। হেতেমখাঁ এলাকার আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তির কাছে আগে থেকেই বাগানটি চার বছরের জন্য লিজ প্রদান করার সর্তেও আমার কাছে পূণরায় নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গাছ বিক্রি করেন বাপ্পা হাজি। পরে সে গাছ কাটতে দেননি হাজি। সেই টাকা চাইতে গেলে আমাকে হুমকি প্রদান করেন তিনি।

শালবাগান এলাকার মো. আইনাল নামের এক ভ্যান চালক বলেন, এর আগে ৮টি জানালা ও ১০ দরজা বাপ্পা হাজির কাছে ক্রয় করেছিলাম ৯ হাজার টাকায়। তাকে সেসময় নগদ ৭ হাজার টাকা প্রদান করি। বাকি ২ হাজার টাকা পরে দেয়ার কথা থাকলেও আমার নামে থানায় অভিযোগ করে হেনস্থা করেন বাপ্পা হাজি। আইনাল আরও জানান, বাপ্পা হাজি সুবিধা লোক না। তিনি গরিবের ওপর অন্যায় করেন।

এছাড়াও মৌগাছির উপজেলার চেয়ারম্যান আলামিনকে মোবাইল ফোনে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। এরপর তার আপন ভাইয়ের জমিটি তার বাবা-মার কাছে থেকে নিজ নামে লিখিয়ে নেন। এতে তার ভাই থানায় মামলা করলে তাকে হাযতবাস করতে হয়। এছাড়াও আরো বহু লোককে তিনি ওয়াদা করেও পরে প্রতারণা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বাপ্পা হাজীর ০১৯৪৭১৭৯১৯২ ও ০১৭১৫৫০৭৪২৬ নাম্বারে কল করা হয়। ০১৭১৫৫০৭৪২৬ নাম্বারে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে একটি ছোট শিশুকে দিয়ে মোবাইল ধরানো হয়। পাশে থেকে তিনি শুনলেও বলা হয় এটি তার (বাপ্পা হাজীর) নাম্বার নয়, ভুল নাম্বার। যার কারণে তার মন্তব্য মেলেনি।

আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় আমির হোসেনের লিখিত অভিযোগটি দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি প্রথমে তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি এমরান আলী।

রাজশাহীর সময় / জি আর