২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:২২:৪৬ অপরাহ্ন


হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য
Rajshahir Somoy Desk
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০১-২০২২
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য


অনলাইন ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে আরেকটি নতুন রহস্য উন্মোচন হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন তার কন্যা সামীরা তানজীন চৌধুরী (মুন্নু)।

তাকে ঢাকার কাছে একটি গোরস্থানে দাফন করা হয়। কিছু নিকটজন এবং ওলামা-মাশায়েখ অনেকটা গোপনেই এ জানাজায় শরিক হন বলে জানান তিনি।

বেশ কিছুদিন আগে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তবে সখানে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি তিনি।

ওই সময় তখন থেকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। ফলে কয়েক দিন ধরে তার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়।
 
তবে একটি গণমাধ্যমকে হারিস চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী মুন্নু জানান, তার বাবা ঢাকাতেই মারা গেছেন।

এর আগে হারিছ চৌধুরীর অবস্থান নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন ওঠে। শোনা যায় ইংল্যান্ডে, আমেরিকায়, আবার কেউ কেউ ইরানে। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে। তবে নতুন তথ্য হলো তিনি দেশেই থেকেছেন। কখনো তাবলিগ জামাতের হয়ে দ্বীনের দাওয়াতে গেছেন, আবার কখনো করেছেন মসজিদে ইমামতি।

মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জানান, হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামীরা বলেছেন, শেষ গোসল, অন্তিমযাত্রা আর আতর গোলাপ ছিটিয়ে আন্তিম শয়ানে শুইয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন তিনিই।

সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক গোরস্থানে দাদুর কবরের পাশে বাবাকে সামাহিত করার কথা জানান সামীরা। কিন্তু আশিক চাচা (আশিক চৌধুরী) সাহস করলেন না।

হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপনে থাকাকালে পরিবারের সঙ্গে খুব সামান্যই যোগাযোগ হয়েছে উল্লেখ করে সামীরা বলেন, বাবা চাইতেন, যা হয় তার ওপর দিয়ে যাক। সন্তান হিসেবে আমাদের, আত্মীয়স্বজন, এমনকি তিনি যে রাজনীতি করতেন সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বও যাতে তার কারণে কোনো বিপদে না পড়ে সে জন্য কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। মাঝেমধ্যে তিনি ফোনে সবার খোঁজ নিতেন।

সামীরা আরও বলেন, 'আমি কয়েক ঘণ্টার নোটিশে সব ছেড়েছুড়ে ২৭ আগস্ট ঢাকা পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবা লাইফ সাপোর্টে। করোনা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাঁচাতে পারলাম না বাবাকে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক মুহূর্ত আড়াল করতে চাইনি। সবসময় তার পাশে বসেছিলাম। ভয় আর শঙ্কা আমাদের সব তছনছ করে দিল। মাত্র কয়েক দিন আগে ছোট চাচা (সেলিম চৌধুরী) স্ট্রোক করে মারা গেলেন। তার আগে মারা গেলেন হাসনাত চাচা (হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই), হারালাম এক ফুপু ও চার ফুপাকে। এমন বিপর্যয় আর কোনো পরিবারে হয়েছে কি না আমার জানা নেই।
 
হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে মেয়ে সামীরা বলেন, এর সবটাই রাজনৈতিক। আমার বাবা হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন, সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তিনি জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার মতো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য লড়েছেন। তার সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গৌরববোধ করি।
 
তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সামীরা বলেন, এসব অভিযোগ কোনো শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে আসেনি, বলেন! এগুলোর ভিত্তিও আমাদের কারো অজানা নয়। পারিবারিকভাবে চৌধুরী পরিবার অসচ্ছল নয়। জন্মের আগে থেকে ট্রলারের ব্যবসা আর ছোটবেলা থেকে আমাদের গাড়ির শোরুম দেখে আসছি। ঢাকা এবং সিলেটে ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের পরিবার ঐতিহ্যমণ্ডিত। ক্ষমতায় থাকাকালে গুলশানে একটি বাড়ি সরকারি নিয়মানুযায়ী রাজউক থেকে কিনেছিলেন যা সরকার পরবর্তীতে বাতিল করে ফেরত নিয়েছে। আর কী এমন আছে! আমার দাদা সিও (সার্কেল) অফিসার ছিলেন, এমএলএ ইলেকশনও করেছেন। তার সব ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমার বাবা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোকপ্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমাদেরকেও সুশিক্ষিত করে গড়েছেন। আমি আইন পাস করে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসেবে জুরিখে কাজ করছে।
 
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সামীরা বলেন, আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা ও ফুপু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদ্রাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দিই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।
 
তার বাবা লন্ডনে মারা গেছেন বলে আশিক চৌধুরী যে মন্তব্য করেছেন সেটার প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, 'হয়তো কোনো চাপে বা পরিস্থিতির কারণে তিনি এমনটা বলে থাকতে পারেন। এই একই কারণে তিনি বলেছিলেন সিলেটে দাফন করা নিরাপদ হবে না। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে তার কোনো কথা হয়নি।

সামীরা আরও বলেন, আমার বাবার মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হোক সেটা সন্তান হিসেবে আমার কাম্য হতে পারে না।