২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৩:১৭:১৩ অপরাহ্ন


সন্তানকে অতিরিক্ত আগলে রাখাই হতে পারে ক্ষতির কারণ
ফারহানা জেরিন এলমা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২২
সন্তানকে অতিরিক্ত আগলে রাখাই হতে পারে ক্ষতির কারণ ফাইল ফটো


প্রতিটি মা-বাবাই নিজের সন্তানের যত্ন নিয়ে থাকেন, তাদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধার প্রতি নজর রাখেন। তবে এ সবই একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত করা উচিত। যদি কোনও অভিভাবক সন্তানকে হাতে হাতে সবকিছু করে দেন, ভুল থেকে বাঁচাতে থাকেন বা সান্ত্বনা দিতে খুব বেশি সময় লাগান, তা হলে আপনারা ওভার প্রোটেক্টিভ বা অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানকারী অভিভাবকদের তালিকায় পড়েন।

তাই আগে থেকে জেনে রাখা ভালো যে, আপনাদের লালন-পালনের এই পদ্ধতি সন্তানের সামগ্রিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

হতাশা, অসাফল্য, লোকসান, কষ্ট, অস্বীকৃতি, চ্যালেঞ্জ, আক্রোশ ও নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে একজন ওভার প্রোটেক্টিভ অভিভাবক সন্তানকে রক্ষা করে থাকে। অভিভাবকদের এই প্রবণতা শিশুর শারীরিক, আবেগপ্রবণ ও মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। এ ধরনের অভিভাবকরা বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়ার ওপর নজর রাখেনই, পাশাপাশি তাদের বন্ধুবান্ধবের ওপরও দৃষ্টি রাখেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না-করলেই রেগে যাওয়া, তাদের গোপনীয়তাকে গুরুত্ব না-দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।

অভিভাবকরা ওভার প্রোটেক্টিভ হলে, সন্তানের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অক্ষমতা দেখা দেয়। এরা স্বাধীন ভাবে জীবনযাপন করতে পারে না। আবার অ্যাংজাইটিগ্রস্ত মা-বাবার মধ্যে অতি-অভিভাবক হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

ওভার প্রোটেক্টিভ পেরেন্টিং বাচ্চাদের মধ্যে কিছু খারাপ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। চলুন বিষয়গুলো জেনে আসা যাক-

>নিজের সন্তানের অত্যধিক দেখাশোনা করা, তাদের অসাফল্য থেকে রক্ষা করা ভবিষ্যতে তাদের অনেক সমস্যার মুখে ঠেলে দিতে পারে। এমন করে অভিভাবকরা সন্তানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার, ভুল করার, অসফল হওয়ার ও শিক্ষা গ্রহণের থেকে বঞ্চিত করছেন। এর ফলে পরবর্তী জীবনে তারা কোনও বিপরীত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে না। এ ছাড়াও বাচ্চারা ঝুঁকি নিতে বা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতেও শিখবে না। তাই সন্তানকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান করার পরিবর্তে, তাদের চিন্তা করতে ও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন।

> আপনার অতিরিক্ত নিরাপত্তার ছায়ায় সন্তান বড় হলে, তারা সামাজিক চিন্তা, অবসাদের মোকাবিলা করা ও সমস্যার সমাধান করতে অসক্ষম থেকে যাবে। তারা নিজেকে দুর্বল মনে করার পাশাপাশি অধিক সংবেদনশীল, সোজাসাপটা ও মানসিক দিক দিয়ে দুর্বল থেকে যাবে। ভয় দূর করার কৌশল তারা শিখতে পারবে না, আবার নিজের স্বাচ্ছন্দ থেকে বেরিয়ে আসতেও পারবে না তারা। তাই বাচ্চাদের নিজের মতামত ব্যক্ত করতে শেখান।

> মা-বাবা বাচ্চাদের অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ করলে, তারা নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অসক্ষম থেকে যায়। এর ফলে তাদের আত্মসম্মান বোধ কমতে থাকে। তাদের মধ্যে সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। বাচ্চারা ধরেই নেবে যে তারা অক্ষম ও কঠিন লক্ষ্য সাধন করার অনুপ্রেরণা থাকবে না তাদের মধ্যে। এর ফলে তারা নিজের ওপরই সন্দেহ করতে শুরু করবে। সুযোগ হাত ছাড়া করবে ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অক্ষম থাকবে।

> ওভার প্রোটেক্টিভ মা-বাবারা সন্তানের সামনে এমন একটি পৃথিবীর ছবি তুলে ধরেন, যার সমস্ত কিছু খারাপ। এই সন্তানরা পরবর্তীকালে নানান ধরনের ছোট-বড় অসামাজিক কাজ করে থাকে, আবার অন্যের সঙ্গে কথা বলতেও অসমর্থ হয়। এর ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করবে। বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক পালন তাদের কাছে খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এমন বাচ্চারা অন্যের অ্যাটেনশান, স্বীকৃতি ও অনুমোদন প্রত্যাশা করে। এটি আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আনন্দের জন্য তারা আপনার ওপরই নির্ভরশীল থাকবে। সন্তানকে কোনও অপরাধবোধ ছাড়া বাঁচতে শেখান, এর ফলে তারা সমাজে সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারবে।

> মা-বাবার কাছ থেকে বার বার বকুনি বা মার খাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার পেতে পারে। অভিভাবকরা নিজের অজান্তেই বাচ্চাদের মধ্যে নেতিবাচক শক্তির সঞ্চার করে দেন। অধিক বাধা ও স্বাধীনতার অভাবে সন্তান আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে শুরু করবে।

এর ফলে তারা আপনাকেই ভুল বুঝবে এবং আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। শুধু বাড়িতেই নয়, সমবয়সি অন্য বাচ্চাদের প্রতিও তারা শত্রুতাপূর্ণ ব্যবহার প্রদর্শন করতে পারে। মা-বাবা হিসেবে সন্তানের মধ্যে আক্রমণাত্মক ও শত্রুতার মনোভব নয়, বরং সহানুভূতি, দয়া ও করুণার সঞ্চার করা উচিত।

রাজশাহীর সময় /এইচ