১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৫১:৪০ অপরাহ্ন


বুদ্ধিজীবি ও গণহত্যার অভিযোগে দুই যুদ্ধাপরাধী‌কে গ্রেফতার
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৩-২০২২
বুদ্ধিজীবি ও গণহত্যার অভিযোগে দুই যুদ্ধাপরাধী‌কে গ্রেফতার ফাইল ফটো


টাঙ্গাইলের গোপালপু‌রে একাত্তরে বুদ্ধিজীবি ও গণহত্যার অভিযোগে দুই যুদ্ধাপরাধী‌কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক তদন্তকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন: জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের ছেলে মনিরুজ্জামান কোহিনূর ও চাতুটিয়া গ্রামের মৃত শফি উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন তালুকদার। 

মামলার বিবরণে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া দুইজন একাত্তর সালে পাকস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী এবং রাজাকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একাত্তর সালে ৩০ জুন রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঝাওয়াইল বাজারে হামলা চালান এবং ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক, সুরেন্দ্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মসলিম উদ্দীনকে আটক করে গোপালপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে টানা এক সপ্তাহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তারপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। তার পরিবার শহিদ মসলিম উদ্দীনের লাশের কোনো সন্ধান পায়নি। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার শহিদ মসলিম উদ্দীনকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেন।

অপরদিকে একাত্তর সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার  একদল রাজাকার ও আলবদরকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালান। বর্বর হানাদার বাহিনী আওয়ামী লীগের এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। তারা শতাধিক বাড়িঘরে পুড়িয়ে দেওয়ার পর ১৭ জনকে হত্যা করেন। এ গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন এ দুইজন কুখ্যাত রাজাকার। 

মামলায় আরো বলা হয়, একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হওয়ার আগের দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি খান সেনার সাথে মনিরুজ্জামান কোহিনূর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন।  

পরে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে শিমলা চুক্তি অনুযায়ী মুক্তি পেয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে পাকিস্তান চলে যান । পাকিস্তানি নাগরিক হিসাবে নব্বইয়ের দশকে জাপান যান। ২০০২ সালে তিনি দেশে ফেরেন। তিনি বর্তমানে একজন শিল্পপতি এবং দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা। অপরদিকে রাজাকার আলমগীর হোসেন তালুকদার ৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসে‌বে যোগ দেন। পরে পৌরশহরের সূতি দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে গত নভেম্বরে অবসরে যান।

গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, ট্রাইবুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানাপত্র মোতাবেক মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের তার বাসা থেকে এবং আলমগীর হোসেনকে গোপালপুর পৌর শহরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। 

 আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মতিউর রহমান জানান, মনিরুজ্জামানকে ট্রাইবুনালে হাজির করা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর আলমগীর হোসেনকে সাভার পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। 

এদিকে, দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের খবরে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ফাঁসির দাবিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে পৌর শহরে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজশাহীর সময় /এএইচ