২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:০০:৪২ অপরাহ্ন


রাণীনগরে যৌতুকের দাবীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারপিট করে বাড়ি ছাড়া করলেন আওয়ামী লীগ নেতা
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ)
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৭-২০২৩
রাণীনগরে যৌতুকের দাবীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারপিট করে বাড়ি ছাড়া করলেন আওয়ামী লীগ নেতা রাণীনগরে যৌতুকের দাবীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারপিট করে বাড়ি ছাড়া করলেন আওয়ামী লীগ নেতা


নওগাঁর রাণীনগরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ আকন্দের বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে নির্যতন করার  অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার একডালা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত  প্রভাবশালী আব্দুল মজিদ আকন্দ একডালা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগির অভিযোগ, ঘটনার পর থানায় গেলে মজিদ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে রবিবার (১৬জুলাই)  নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই গ্রামের মৃত-মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে দুই সন্তানের জননী অসহায় শিউলী বিবি (৪৭)। 

অভিযোগে জানা গেছে, শিউলি বিবি প্রথম স্বামী ভালো না হওয়ার কারণে প্রায় ৫বছর আগে স্বামীকে তালাক দিয়ে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি এসে বসবাস করতেন। জীবিকার তাগিদে বাড়িতেই কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে আসছিলেন তিনি। সেলাইয়ের কাজ আরো বেশি হওয়ার আশায় শিউলি রাজাপুর গ্রামের মোড়ে ফুফাতো ভাই আব্দুল মজিদ আকন্দের মার্কেটে গত বছর একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতে থাকেন। কিছুদিন পর স্থানীয় কিছু বখাটে শিউলিকে কু-প্রস্তাব দেওয়া শুরু করে। এরপর শিউলি  বিষয়টি আব্দুল মজিদ আকন্দকে জানালে শিউলিকে বিয়ে করে মাথার উপর ছাতা হওয়ার বিভিন্ন প্রলোভন দেয় মজিদ আকন্দ। 

শিউলি বিবি জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ২০তারিখে মুসলিম শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ১লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে মজিদ আকন্দ শিউলিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মজিদ আকন্দ নানা কৌশলে তার  সঞ্চয় করা প্রায় ৫লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তিতে মজিদ আকন্দ তার ১ম স্ত্রী, মেয়ে, জামাই, ভাই ও ভাতিজাদের কুপরামর্শে তার কাছ থেকে আরও ৩লাখ টাকা যৌতুক হিসাবে দাবী করেন। এরপর তার দাবিকৃত টাকা শিউলি দিতে না চাইলে  মজিদ আকন্দ তার সঙ্গে আর সংসার করবে না বলে চলতি মাসের ৫তারিখ বিকেলে মজিদ আকন্দসহ অন্যরা সবাই মিলে শিউলি বিবিকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। 

তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর ৯ জুলাই মজিদ আকন্দ গোপনে তালাক নামা আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তালাক নয়, সংসার করার জন্য আমিমসহ মা ও অন্যরা মজিদ আকন্দের বাড়িতে যায়। পরবির্ততে ১২জুলাই আমার বাবার বাড়িতে সন্ধ্যায় মজিদ আকন্দসহ অন্যদের নিয়ে বসলে যৌতুক ছাড়া মজিদ আকন্দ  আমার সঙ্গে  সংসার করার কথা বলে শিউলির স্বজনরা। কিন্তু মজিদ আকন্দ ৩লাখ টাকা ছাড়া শিউলিকে নিয়ে সংসার করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবার মজিদ আকন্দসহ অন্যরা লাঠি দিয়ে শিউলি বিবিকে বেদম ভাবে মারপিট করে। 

এতে করে শিউলি বিবি গুরুত্বর আহত হলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। শিউলি বিবি একটু সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে চলতি মাসের ১৫তারিখে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে ওইদিন বিকেলে থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় পরের দিন ১৬তারিখে আদালতের মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাধান পাওয়ার আশায় মজিদ আকন্দকে প্রধান করে ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিউলি বিবি। 

শিউলি বিবি আরো জানান যে, দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তিনি এই পৃথিবীতে খুবই অসহায়। মজিদ আকন্দ এতোই প্রভাবশালী যে তার ভয়ে গ্রামের কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারে না। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মজিদ আকন্দের অবৈধ তালাক মানে না। অনেক প্রলোভন দিয়ে মজিদ আকন্দ তাকে বিয়ে করেছেন। তাকে বিয়ে করার কারণে চলতি বছর মজিদ আকন্দ হজ পর্যন্ত করতে যাননি। তার অর্থসহ সবকিছুই মজিদ আকন্দ লুট করে নিয়েছে। আর এখন এসে কোন কারণ ছাড়াই মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে বলছে যে তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করবে না। শিউলি এসবের কোন কিছুই মানেন না। তিনি মজিদ আকন্দের সঙ্গে ঘর সংসার করতে চান। শিউলি বিবি আশাবাদি যে মহামান্য আদালত তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মজিদ আকন্দের সঙ্গে সংসার করার সেই সুযোগ করে দিবেন।

শিউলি বিবির মা জিন্নাতুন বেওয়া বলেন মজিদ আকন্দ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। পরবর্তিতে মজিদ আকন্দ নিয়ম মাফিক আমাদের সাক্ষী করে কাজীর মাধ্যমে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিনা কারণে মজিদ আকন্দ আমার মেয়েকে মারপিট করেছে। আমি এর বিচার চাই। আমরা গোপনে দেয়া মজিদ আকন্দের তালাক মানি না। যৌতুক ছাড়াই আমার মেয়ে মজিদ আকন্দের ঘর সংসার করবে এই আশায় আদালতের আশ্রয় আমরা নিয়েছি। আশা রাখি আদালত আমাদেরকে সুষ্ঠ বিচার করে দিবেন। 

এই বিষয়ে আব্দুল মজিদ আকন্দ মুঠোফোনে জানান, যৌতুকের দাবীতে শিউলিকে মারপিট করার যে অভিযোগ তা সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট। আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে আমি সম্প্রতি তাকে তালাক দিয়েছি। সে এখন আর আমার স্ত্রী নয়। আমি তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করতে চাই না।

একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান আলী মুঠোফোনে জানান এই বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছিমাত্র। এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে লিখিত কিংবা মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।