২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন


আল্লাহ যে কারণে বান্দার প্রতি রাগ হন
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৬-২০২৩
আল্লাহ যে কারণে বান্দার প্রতি রাগ হন ফাইল ফটো


ক্ষমা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে আনন্দের কাজ। কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বেশি খুশি হন। যেভাবে মানুষ জনমানবহীন মরুভূমিতে কিংবা গহিন অরণ্যে নিজের বাহন ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী হারিয়ে তা আবার ফিরে পেলে যে আনন্দ পায়; তেমনি বান্দা গুনাহ করে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসলে তিনি বেশি খুশি হন। এমনকি মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চাইলে তিনি রাগ হন। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন।’

সব মানুষের তওবা এক রকম নয়। যেমন সব মানুষের গুনাহও এক রকম নয়। কিন্তু গুনাহ না থাকলেও আল্লাহর কাছে তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে; কারণ তিনি তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনায় বেশি খুশি হন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নিষ্পাপ হওয়ার পরও প্রতিদিন একশতবার তওবা তথা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-

‘আল্লাহ আপনার অতিত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরলপথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা ফাতাহ : আয়াত ২)

এ থেকেও বুঝা যায় যে, সবার তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনার ধরন এক রকম নয়; ব্যক্তিভেদে তওবার অবস্থা ও ধরন পরিবর্তন হয়। আল্লামা আলুসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তওবাকারীদের মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী তাদের তাওবার ধরন কেমন হবে তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-

১. সাধারণ মুসলমানের তাওবা

> অন্যায়ের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া;

> ভবিষ্যতে এমন অন্যায় না করার সংকল্প গ্রহণ করা;

> কারও প্রতি জুলুম অত্যাচার হয়ে থাকলে তার প্রতিকার তথা ক্ষতিপূরণ দেওয়া;

> ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না হলে অন্তত ক্ষতিপূরণের নিয়ত বা সদিচ্ছা পোষণ করা।

২. বিশেষ ব্যক্তির তওবা

> যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা;

> মন থেকে যাবতীয় কু-চিন্তা দূর করা;

> আমলের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্জন করা।

৩. মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির তওবা

> তাঁদের অবস্থার উন্নতিতে তওবা করা;

> তাঁদের শান ও মাকাম তথা মান-মর্যাদার উন্নয়নে তওবার মাধ্যমে চেষ্টা করা।

কেননা কাবা শরিফ পুনরায় নির্মাণকালে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে এভাবে তওবা করেছিলেন-

‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাওবা করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন।’ যা ছিল মূলত তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির দোয়া।

৪. নবিজি কেন তওবা করতেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওবা করা বা গুনাহ মাফ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাহলে আপনি কেন প্রতিদিন এত বেশি তাওবা-ইসতেগফার করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-

‘আমি কি তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না?’ (বুখারি, মুসলিম)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু গুনাহ করলেই তাওবা ও ইসতেগফার করতে হয়, এমনটি নয় বরং আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এ তওবা-ইসতেগফার।

সুতরাং যারা গুনাহ পরিত্যাগ করে চলেন বা গুনাহের কাজে কম লিপ্ত হন, তাদের জন্য সহজ উত্তর হলো-

প্রথমত : তওবা-ইসতেগফার আল্লাহর নির্দেশ এবং কল্যাণ পাওয়ার উপায়।

দ্বিতীয়ত : তওবা-ইসতেগফার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত একান্ত আমল।

তৃতীয়ত : তওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার বিষয়টিও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং ব্যক্তিভেদে সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে তাঁরই কাছে বেশি বেশি তওবা করার বিকল্প নেই। এ তাওবা করার মাধ্যমেই রয়েছে মর্যাদা ও সম্মান বাড়ার একমাত্র উপায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অবস্থা ও অবস্থানভেদে সঠিকভাবে তাওবার করার এবং তাওবার মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধির তাওফিক দান করুন। আমিন।