১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:২২:২৫ অপরাহ্ন


কুস্তিগিরদের বুকে-পিঠে হাত দিতেন ব্রিজভূষণ!
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৬-২০২৩
কুস্তিগিরদের বুকে-পিঠে হাত দিতেন ব্রিজভূষণ! কুস্তিগিরদের বুকে-পিঠে হাত দিতেন ব্রিজভূষণ!


কুস্তিগিরদের আন্দোলনে উত্তাল গোটা দেশ। কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ২টি এফআইআর ও ১০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যার তদন্ত করছে দিল্লি পুলিশ।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। নাবালিকা-সহ বেশ কয়েকজন কুস্তিগিরের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার, শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগ ওঠে বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য কুস্তিগিরদের মধ্যে। সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাট, বজরং পুনিয়ার মতো অলিম্পিক্সে পদকজয়ী কুস্তিগিররা পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হন। শুরু হয় যন্তরমন্তরে ধর্না।

কুস্তিগিরদের দাবি, অবিলম্বে ব্রিজভুষণকে ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেফতার করা। যদিও এখনও এই দুই দাবির কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এখনও ঘটনার তদন্ত চলছে। সেই তদন্তের পরে রিপোর্ট কী সামনে আসে সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু তার আগে জেনে নেওয়া যাক বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোন কোন কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই দু’টি এফআইআর দায়ের হয়েছে।

১. এক কুস্তিগিরের অভিযোগ, ব্রিজভূষণ তাঁকে ডিনার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর পরে ওই মহিলা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করেন ফেডারেশন সভাপতি। তাঁর শরীরে আপত্তিজনকভাবে হাত দেন, এমনকী শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কিনা, সেটা দেখার জন্য বুকেও হাত দেন ব্রিজভূষণ।২. ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আর একটি অভিযোগ যে, তিনি এক মহিলা কুস্তিগিরের টিশার্ট ধরে টান মারেন। তাল সামলাতে না পেরে তাঁর গায়ে পড়ে গেলে ওই মহিলা কুস্তিগিরের বুক স্পর্শ করেন বিজেপি সাংসদ।৩. আর একটি অভিযোগ, এক মহিলা কুস্তিগিরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ব্রিজভূষণ। শুধু তাই নয়, মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষও দিতে চান।৪. এক মহিলা কুস্তিগিরের অভিযোগ, শারীরিক পরীক্ষার অছিলায় তাঁর পেটে ও বুকে হাত দিয়েছিলেন ব্রিজভূষণ।৫. আর এক অভিযোগকারিনী তাঁর অভিযোগে বলেছেন, খেলার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন তাঁকে আপত্তিজনকভাবে ছুঁয়েছিলেন ব্রিজভূষণ।৬. অন্য এক মহিলা কুস্তিগির ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর কাঁধে হাত দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতেন বিজেপি সাংসদ তথা ফেডারেশনের সভাপতি।

এই দুই এফআইআরের মধ্যে প্রথমটি দায়ের করেছেন ৬ জন মহিলা কুস্তিগির। আর দ্বিতীয় এফআইআর দায়ের হয়েছে এক নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে। অর্থাৎ পকসো আইনের আওতায় এই অভিযোগ করেছেন তিনি।

ওই নাবালিকার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ছবি তোলার অজুহাতে ব্রিজভূষণ তাঁর মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিল, শক্ত করে ধরেছিল। ওই নাবালিকার কাঁধে ও বুকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছিল বলেও অভিযোগ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে।

দিল্লির কনট প্লেস থানায় ব্রিজভূষণের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। যদিও কুস্তিগিরদের অভিযোগ, প্রথমে পুলিশ কোনওভাবেই বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নিতে রাজি ছিল না। সেই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন সাক্ষী মালিকরা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই ২৮ এপ্রিল পুলিশ এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।

জানা গেছে, ওই দুই এফআইআরে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিররা। সেই এফআইআর অনুযায়ী, ব্রিজভূষণ মহিলা কুস্তিগিরদের কাছে যৌন সুবিধা চেয়েছিলেন! এমনকী মেয়েদের বুকে-পিঠেও হাত দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ, এমনই অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪ (এ), ৩৫৪(ডি) ও ৩৪ ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যার অর্থ, অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্রিজভূষণের তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।