২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:২১:৪৯ পূর্বাহ্ন


রাবিতে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের আন্দোলন
আল্-মারুফ, রাবি প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২২
রাবিতে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের আন্দোলন রাবিতে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের আন্দোলন


হলের ডাইনিং-এ কটনবাড পাওয়ার অভিযোগ তুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন হলটির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই আন্দোলন করেন তারা। এসময় তারা সাধারণ কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে হলের গেটে তালা লাগিয়ে দেন এবং প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেন। 

হলের গেটে তালা লাগিয়ে দিলে এসময় অবরুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের সাথে সাধারণ কিছু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হলের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন এবং প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরেও হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান উন্নত হয়নি। প্রতিবছর নিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইন্টারনেটের জন্য ফি নিলেও ন্যূনতম ইন্টারনেট কানেক্ট করার মতো ডাটাও তারা পাচ্ছে না। হলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য যে রিডিংরুম রয়েছে সেখানে যথেষ্ট জায়গা নেই। কিন্তু এতো কিছুর পরও হলটির প্রভোস্ট নিজের দপ্তরে এসি লাগিয়েছেন। আবার হলের আবসিকতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মাস্টার্স বা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা যেখানে হলে সিট পায়নি সেখানে প্রথম বর্ষ বা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা অহরহ আবাসিকতা পেয়েছেন। 

তবে ছাত্রলীগের কিছু বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উক্ত হলের প্রভোস্ট ড. সুজন সেন ছাত্রলীগের মাধ্যমে ওঠা অবৈধ অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হল থেকে নামিয়ে সদ্য হলের সিট বরাদ্দ পাওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠান। তবে নামিয়ে দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। এরই জেরে মূলত এই আন্দোলনের আয়োজন করেন উক্ত হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে হলের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় উঠিয়ে এনে আন্দোলনকে বেগবান করা হয়। 

এসময় উক্ত হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা হলে তিনি বলেন, 'ছাত্রদের প্রত্যেকটি দাবি যৌক্তিক। আমরা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের সাথে আন্দোলন করছি।' 

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল কর্তৃপক্ষ, প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টার সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আলোচনা চলাকালীন সময়ে হলের ডাইনিং এর কর্তৃপক্ষ এবং ম্যানেজারের সাথে কথা বলা হলে তারা বলেন, 'কটনবাড দিয়ে আমরা এখানে কোনো কাজ করি না। এখানে কটনের কোনো ব্যবহার নেই। ডালের বাটি দিয়ে পানি আনতে গেলে এক শিক্ষার্থী কটন দেখিয়ে ডালের বাটি উল্টে ফেলে দেয়। তারপর এই ঘটনা।' তাদের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ হয়তো কটনবাড দিয়ে থাকতে পারে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে অন্যান্য সমস্যার সমাধান হলেও আবাসিকতার জন্য হল থেকে বরাদ্দকৃত সিট নিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার উচ্চবাচ্য শোনা যায়। তাকে বলতে শোনা যায়, 'হলের আবাসিকতার তালিকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও ছাত্রলীগের মিটিং-মিছিল করা শিক্ষার্থীদের নাম নেই। এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার নতুন ১৯৬ জনের তালিকা বাতিল না করা হলে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।'

তবে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেটা অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর পক্ষ নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে হলের খাবারের মান উন্নয়ন, রাউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি, জয়ী খেলোয়াড় দলের জন্য পোষাক ও আবাসিকতার তালিকায় থাকা সমস্যা সমাধান করবে। এসব করা না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলন শুরু করলে আমরা তাদের সাথে যোগ দিবো।' 

ছাত্রলীগের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি- চতুর্থ বর্ষ, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আবার মাস্টার্সের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই তাদের রুমে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

এদিকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আগামী রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বসার কথা রয়েছে। 

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হকের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, 'ওরা (আন্দোলনকারীরা) অনেকগুলো সমস্যার কথা বলেছে। তারা তাদের দাবিগুলো জানিয়েছে। আমরা শুনেছি। প্রশাসনের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। অ্যালোটেড সিটগুলোর লিস্ট আমরা আবার দেখবো। ভুলভ্রান্তি থাকলে সমাধান করা হবে।'  

হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুজন সেন বলেন, 'তারা তাদের মতো কিছু দাবি জানিয়েছে। আমরা সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছি, আমরা প্রশাসনের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিবো।

রাজশাহীর সময় / জি আর